মানিকগঞ্জ, বাংলাদেশ – জুলহাস মোল্লা, একজন সাধারণ কৃষকের ছেলে, মাত্র দেড় লাখ টাকা খরচে নিজের তৈরি বিমান উড়িয়ে সকলকে চমকে দিয়েছেন। ২৮ বছর বয়সী এই তরুণের স্বপ্ন ছিল আকাশে উড়ার। তবে তাকে আর বিমানে ওঠার সুযোগ না মেলায়, তিনি নিজেই বিমান তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন এবং একদিন তা আকাশে উড়ানোর স্বপ্ন দেখেন।
২০১৪ সালে এসএসসি পাসের পর অর্থাভাবে উচ্চশিক্ষা নিতে না পারলেও জুলহাস তার প্রতিভা ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে প্রায় চার বছরের চেষ্টায় নিজেই বিমান তৈরি করেন। ইউটিউব দেখে, সাধারণ যন্ত্রাংশ দিয়ে প্লেনটি তৈরি করতে শুরু করেন। অবশেষে তার কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তিনি নিজের তৈরি বিমানে সফলভাবে উড্ডয়ন করতে সক্ষম হন।
গতকাল, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার জাফরগঞ্জ বাজার এলাকায় তিনি তার তৈরি বিমান উড়িয়ে এলাকাবাসীকে অবাক করে দেন। বিমানটি ভূমি থেকে ৩০ ফুট উঁচু হয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার পথ উড়েছিল।
জুলহাসের মায়ের অনুভূতি ছিল অপার আনন্দে পরিপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলের তৈরি প্লেন দেখতে চরে কত লোক এসেছে, আমি বলেই বুঝাতে পারব না।’’ এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, তারা কখনো ভাবেননি যে, এমন একজন সাধারণ তরুণ এমন কিছু দারুণ কাজ করে দেখাবে। মনির হোসেন, একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘জুলহাস যদি লেখাপড়া করতে পারত, তবে সে আরও বড় কিছু করতে পারত।’’
জুলহাসের উদ্ভাবনটি জানার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার পাশে দাঁড়ান। তার নির্দেশে, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতা এবং ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন জুলহাসকে নগদ ৫০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেন। এ সময় তারা তাকে বিমানে চড়ানোর এবং তার মেধাকে আরও উন্নত করার আশ্বাস দেন।
তারেক রহমান জানিয়ে দিয়েছেন, তার নেতৃত্বে বিএনপি সবসময় প্রতিভাবান তরুণদের সহায়তা করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা জুলহাসের মতো প্রতিভাবান তরুণদের পাশে দাঁড়াব, যাতে তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।’’
জুলহাস তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমি কখনো ভাবিনি, আমার এই কাজ এত মানুষের নজরে আসবে। তারেক রহমানের সহযোগিতা আমার জন্য একটি বড় প্রেরণা। এই টাকা দিয়ে আমি আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করব।’’
এলাকাবাসী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাকে প্রশংসা জানানো হয়েছে। ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা, জেলা প্রশাসক, জুলহাসের উদ্ভাবনী চিন্তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
জুলহাসের এই অসাধারণ উদ্ভাবন দেশের প্রযুক্তিগত বিকাশের জন্য একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তার কাজের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, সীমিত সম্পদে এবং উদ্ভাবনী চিন্তা দিয়ে তরুণরা বড় কিছু করতে পারে।