ঢাকা ০৬:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ
Logo সিরাজনগর দরবার শরীফের পবিত্র জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন Logo সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ Logo পিলখানা ট্র্যাজেডি: সোহেল তাজের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন, দাবী সুষ্ঠু তদন্তের Logo আবারো বন্যার শঙ্কা: আবহাওয়া অধিদপ্তর Logo সারাদেশে চিকিৎসকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা Logo কেমন থাকবে আজকের আবহাওয়া Logo শ্রীমঙ্গলে ময়লার ভাগাড় সরানোর দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন: ৭ বছরের প্রতীক্ষা শেষে নতুন আশ্বাস Logo হাতিরঝিল লেকে নারী সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধার: পুলিশের তদন্ত শুরু Logo সরকার আত্মসাৎকারীদের স্থানীয় সম্পদ অধিগ্রহণ ও বিদেশি অর্থ ফেরত আনতে উদ্যোগী Logo মৌলভীবাজারে বন্যা পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি: চরম সংকটের মুখে লাখো মানুষ (ভিডিও সহ)

মৌলভীবাজারের কদমহাটায় বন্যায় ভাঙ্গন

মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই চরম আকার ধারণ করছে। জেলার চারটি প্রধান নদী—মনু, ধলাই, কুশিয়ারা, ও জুড়ী—পানি ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সহস্রাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। বন্যার কারণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নতুন নতুন অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। নৌকার অভাবে স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যার্তদের উদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছেন। এরই মধ্যে, জেলার অনেক বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, মনু নদীতে রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপদসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার এবং চাঁদনীঘাট এলাকায় ৮০ সেন্টিমিটার উপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার এবং জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ১৭৭ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু এবং ধলাই নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় জেলার কয়েক লাখ মানুষ চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।

কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও, জয়চন্ডী, সদর, রাউৎগাঁও এবং পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি। সড়ক পথেও ওই উপজেলার অনেক গ্রামের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রাজনগর উপজেলায় মনু নদীর একামধু, মিঠুপুর, ভাঙ্গার হাটে, কদমহাটা, তারাপাশা এবং হরিপুরে ভাঙন দেখা দেওয়ায় উপজেলার প্রায় ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি মৌলভীবাজার-কুলাউড়া আঞ্চলিক সড়কেও উঠেছে, ফলে ওই এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কমলগঞ্জ উপজেলায় অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষেরা জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের মাঠে উপস্থিতির অভাবে তারা তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানিয়েছেন, বাঁধ উপচে পানি যাতে গ্রামে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

অবস্থা আরও খারাপ হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। বন্যার কারণে মৌলভীবাজার জেলার প্রধান ফসল আমন ধান এবং সবজি ক্ষেত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। মৎস খামারগুলো প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা ত্রাণ সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছেন, তবে এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নিজেদের উদ্যোগে কিছু সহায়তা প্রদান করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়।

মৌলভীবাজারের এই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। নদীগুলোর পুনর্বাসন, বাঁধগুলোর সংস্কার এবং বন্যা পূর্বাভাসের আধুনিকায়ন করা জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়।

বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করা না হলে এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু না হলে জেলার মানুষের জীবনযাত্রা আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

এদিকে মৌলভীবাজার জেলার বন্যা দূর্গত এলাকায় অসহায় মানুষদের সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানিয়েছেন সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এম নাসের রহমান। বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

তিনি দেশ-বিদেশে সকল সামর্থ্যবান দলীয় নেতা কর্মী, সমর্থক ও বিত্তশালীদের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় মানুষদের সাহায্য এগিয়ে আসার আহব্বান জানান।
ভিডিও :

সিরাজনগর দরবার শরীফের পবিত্র জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন

x

মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি: চরম সংকটের মুখে লাখো মানুষ (ভিডিও সহ)

আপডেট সময় ০২:৩৪:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই চরম আকার ধারণ করছে। জেলার চারটি প্রধান নদী—মনু, ধলাই, কুশিয়ারা, ও জুড়ী—পানি ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সহস্রাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। বন্যার কারণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নতুন নতুন অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। নৌকার অভাবে স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যার্তদের উদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছেন। এরই মধ্যে, জেলার অনেক বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, মনু নদীতে রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপদসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার এবং চাঁদনীঘাট এলাকায় ৮০ সেন্টিমিটার উপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার এবং জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ১৭৭ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু এবং ধলাই নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় জেলার কয়েক লাখ মানুষ চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।

কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও, জয়চন্ডী, সদর, রাউৎগাঁও এবং পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি। সড়ক পথেও ওই উপজেলার অনেক গ্রামের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রাজনগর উপজেলায় মনু নদীর একামধু, মিঠুপুর, ভাঙ্গার হাটে, কদমহাটা, তারাপাশা এবং হরিপুরে ভাঙন দেখা দেওয়ায় উপজেলার প্রায় ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি মৌলভীবাজার-কুলাউড়া আঞ্চলিক সড়কেও উঠেছে, ফলে ওই এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কমলগঞ্জ উপজেলায় অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষেরা জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের মাঠে উপস্থিতির অভাবে তারা তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানিয়েছেন, বাঁধ উপচে পানি যাতে গ্রামে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

অবস্থা আরও খারাপ হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। বন্যার কারণে মৌলভীবাজার জেলার প্রধান ফসল আমন ধান এবং সবজি ক্ষেত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। মৎস খামারগুলো প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা ত্রাণ সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছেন, তবে এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নিজেদের উদ্যোগে কিছু সহায়তা প্রদান করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়।

মৌলভীবাজারের এই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। নদীগুলোর পুনর্বাসন, বাঁধগুলোর সংস্কার এবং বন্যা পূর্বাভাসের আধুনিকায়ন করা জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়।

বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করা না হলে এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু না হলে জেলার মানুষের জীবনযাত্রা আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

এদিকে মৌলভীবাজার জেলার বন্যা দূর্গত এলাকায় অসহায় মানুষদের সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানিয়েছেন সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এম নাসের রহমান। বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

তিনি দেশ-বিদেশে সকল সামর্থ্যবান দলীয় নেতা কর্মী, সমর্থক ও বিত্তশালীদের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় মানুষদের সাহায্য এগিয়ে আসার আহব্বান জানান।
ভিডিও :