ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে বিকাশ পরিবেশকের টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনায় ১ সহযোগীসহ ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আত্মসাৎকারী বিকাশ ডিএসও খলিলুর রহমান আক্তারকে গ্রেফতার করেছে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ । আটকের সময় অভিযুক্তদের কাছ থেকে ২ লাখ ২১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, গত ০৪ জুন সন্ধ্যা ৬টার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন-ভোজপুর সড়কের তিতপুর এলাকার বিলাসের পাড় ব্রিজের উপর ছিনতাইয়ের একটি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে খবর পান।
বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন সেলস অফিসার (ডিএসও) খলিলুর রহমান আক্তার অভিযোগ করেন, স্থানীয় আইয়ুব মার্কেট পরিদর্শন শেষে তিনি ভোজপুর বাজারে যাওয়ার সময় দুই অজ্ঞাত ব্যক্তি তার মোটরসাইকেল থামিয়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে এবং তার ব্যাগে থাকা আনুমানিক ৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
তবে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি সন্দেহজনক মনে হলে ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু হয়। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে, এটি পূর্বপরিকল্পিত ছিনতাই নাটক। খলিলুর রহমান আক্তার, পিতা- মৃত আব্দুল ওয়াহিদ ওরফে কুটি মিয়া, সাং সিরাগনগর ও তার সহযোগী ছাইদুল ইসলাম (৩৫), পিতা-নুর মিয়া, সাং-সিরাজনগরকে সঙ্গে নিয়ে মিলেমিশে ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে বিকাশ লিমিটেডের পরিবেশকের টাকা আত্মসাৎ করে।
সূত্র জানায়, ঘটনার দিন দুপুর ২:৩০ মিনিটের দিকে খলিলুর রহমান আক্তার পরিকল্পনা অনুযায়ী তার বন্ধু ছাইদুল ইসলাম ওরফে সাইদীকে তার বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল যোগে করে শহরে নিয়ে আসেন। দুজন আলাদাভাবে কাজ করার জন্য তারা খলিলুর রহমান আক্তারের বড় ভাই সপার আনকারের মোটরসাইকেলটি ছিনতাই নাটকের কাজে ব্যবহার করে ।
পরিকল্পনা মোতাবেক, তিতপুর এলাকায় গিয়ে ছাইদুল ইসলাম খলিলুর রহমান আক্তারের ডান হাতের বাহুতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুটি জায়গায় এবং ডান উরুতে আরও দুটি গভীর ক্ষত করে। যাতে আঘাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য আগেই চেতনানাশক ইনজেকশন ব্যবহার করে তারা। এরপর খলিলুর রহমান আক্তারের বিকাশের ব্যাগে থাকা নগদ ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ছাইদুল ইসলামকে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন আত্নসাতের উদ্দেশ্যে এবং নিজে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকেন। একপর্যায়ে ওই এলাকার পথচারী তাকে ওই অবস্থায় দেখে বিকাশের এক এজেন্টকে ফোন দেন। বিকাশের এজেন্ট ঘটনাটি বিকাশের শ্রীমঙ্গলের পরিবশক অফিসে ফোন দিয়ে জানান।
বিষয়টি নিয়ে বিকাশ লিমিটেডের শ্রীমঙ্গলের পরিবেশক সাউথ সিলেট কোম্পানী লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার শাহাব উদ্দিন আহমদ জানান, তিনি প্রথমে ছিনতাইয়ের বিষয়টি অফিস ম্যানেজার সুমনের কাছ থেকে জানতে পারেন এবং মৌলভীবাজার হাসপাতালে গিয়ে আক্তারকে দেখতে যান এবং বিষয়টি শ্রীমঙ্গল থানার ওসি সাহেবকে বিষয়টি অবহিত করেন।
পরে আক্তারকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার পথে তিনি ঘটনার পুরো বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করলে আক্তারের আঘাতের ধরন ও বক্তব্যে তার সন্দেহ হয়। পরে তিনি শ্রীমঙ্গল অফিসে গিয়ে তার সকল টিম মেম্বারদের নিয়ে তদন্তে নেমে পগেন। প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করে তিনি জানতে পারেন এটি ছিনতাইয়ের ঘটনা নয় এটা সম্পূর্ণ সাজানো একটি নাটক। তিনি পুরো বিষয়টি শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার্স ইনচার্জ আমিনুল ইসলামকে অবহিত করেন।
একয পর্যায়ে শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার্স ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম আবারও গভির রাতে অভিযানে নেমে পড়েন এবং ঘটনাকারী খলিলুর রহমান আক্তারকে আটক করেন। আক্তারের দেয়া তথ্য মতে, পুলিশ গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে ঘটনার পরিকল্পনাকারী ছাইদুল ইসলাম ওরফে সাইদীকে ২ লাখ ২১ হাজার টাকা সহ গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় ০৫ জুন সাউথ সিলেট কোম্পানী লিমিটেড বিকাশ শ্রীমঙ্গল অফিসের ডিস্টিভিশন ম্যানেজার সুমেন রায় বাদি হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।