মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের নিখোঁজ কিশোরী রীমা রানী সরকার (১৫)-কে নিখোঁজের ২৪ দিন পর সিলেট থেকে উদ্ধার করেছে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ভিকটিমের ধর্মান্তরিত খালা শিল্পী সরকার ওরফে শিল্পী বেগম (২৫) এবং তার স্বামী মোবারক মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুর্গাপূজার সপ্তমীর দিনে শ্রীমঙ্গল শহরের আর.কে. মিশন রোডের দুর্গা মন্দিরে অঞ্জলি দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয় কিশোরী রীমা রানী সরকার। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পরও না পেয়ে, ভিকটিমের পিতা মতিলাল বিশ্বাস কমলগঞ্জ উপজেলার কাঠালকান্দি গ্রামের বদরুল আলম (২৫)-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ৭/৩০ ধারায় মামলা (নং–০৮, তারিখ: ০৫/১০/২০২৫) রুজু করা হয়।
মামলার পর থেকেই বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি এবং সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি’র নির্দেশনায়, মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. এম.কে.এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম-সেবা’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ একাধিক অভিযান শুরু করে।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ও সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে মামলার অগ্রগতি ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ ও ১১ অক্টোবর মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি বদরুল আলম (২৫) ও শহিদ মিয়া (৩২)-কে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিমের অবস্থান সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশ ভিকটিমের খালা প্রিয়াংকা সরকার (বর্তমানে শিল্পী বেগম)-এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করে কল রেকর্ড বিশ্লেষণ করে। এতে দেখা যায়, নিখোঁজের দিন ও পরবর্তী সময় ভিকটিমের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
এ সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে যে, সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা থানার ধরাধরপুর এলাকায় শিল্পী বেগম ও তার স্বামী মোবারক মিয়া রীমাকে তাদের ভাড়া বাসায় আটকে রেখেছেন।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত ২৪ অক্টোবর রাতে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের বিশেষ টিম ধরাধরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় ভিকটিম রীমা রানী সরকারকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার এবং শিল্পী বেগম ও মোবারক মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে শিল্পী সরকার প্রেমের সম্পর্কের সূত্রে মোবারক মিয়াকে বিয়ে করেন এবং ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন। ঘটনার দিন তিনি পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মন্দির সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নেন এবং অঞ্জলি শেষে রীমাকে প্রলোভন দেখিয়ে সিলেটে নিয়ে যান।
ঘটনার পর রীমার মা খালার সঙ্গে যোগাযোগ করে কন্যার বিষয়ে জানতে চাইলে, শিল্পী বেগম বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন বলে পুলিশ জানায়।
কিশোরী রীমার নিখোঁজ ও উদ্ধারের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে ঘটনাটিকে অপহরণ হিসেবে দাবি করেছেন, আবার কেউ কেউ আত্মগোপনের আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।
তবে আইন অনুযায়ী, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরীকে ফুসলিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে বা গোপন করার চেষ্টা করা হলে তা অপহরণ হিসেবে গণ্য হয়।
পুলিশ বলছে, ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ বা ব্যক্তির সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা জানতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
শ্রীমঙ্গলে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক কিশোর-কিশোরী নিখোঁজ ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, রীমার ঘটনাটি যেন একটি নজির হয়, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ দমন করা সম্ভব হয়।














