দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি-ঘর ও ধর্মীয় উপসানালয়ে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ এনে ৮ দফা দাবীতে শ্রীমঙ্গলে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের ব্যানারে আওয়ামী লীগ। সোমবার বিকালে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সনাতন সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. হরিপদ রায়, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সুশীল শীল, সদস্য মিতালী দত্ত, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহর তরপদার, ভুনবীর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পিনাকি রঞ্জন দেব, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার দাস, আশিদ্রোন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পুনেন্দু দেব, সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য চন্দন চক্রবর্তী, নির্মল পাল, অমেরেন্দু চন্দ্র, সিন্দুর খান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক বিনয় দেব, সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উত্তরসুর ওয়ার্ড নেতা স্বপন বিশ্বাস, রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগ নেতা উপেন্দ্র দেবনাথ, উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়ন ও চা বাগান ইউনিটের আওয়ামী লীগ সভাপতি/সম্পাদক এবং বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ ঘেঁষা শিক্ষক শিক্ষিকারা।
সমাবেশের কারণে শহরের চৌমুহনী এলাকা ও আশপাশের সড়কপথগুলো লোকারণ্য হয়ে ওঠে। এ সময় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়, যার ফলে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। নাশকতার আশঙ্কায় সেনাবাহিনী এসে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
বিক্ষোভকারীরা হিন্দু জাগরণ মঞ্চের ঘোষিত ৮ দফা দাবি তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং দোষীদের শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন।
- সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন।
- সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন।
- হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান কল্যাণ ট্রাস্টিকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা।
- দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন।
- প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা রুম বরাদ্দ।
- সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন।
- শারদীয় দুর্গাপুজায় ৫ দিন ছুটি প্রদান।
এদিকে, শ্রীমঙ্গলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘর কিংবা মন্দিরে কোনো হামলা বা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। তবে প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এ ধরনের ধর্মীয় সমাবেশ করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের মতে, মুসলিমরা পালা করে হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ও মন্দির পাহারা দিয়ে তাদের রক্ষা করছে, সেখানে ধর্মীয় সমাবেশ উস্কানিমূলক স্লোগান দেয়ায় এখানকার ধর্মীয় সম্প্রীতির ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
পৌর মেয়র মহসিন মিয়া ৫ আগস্ট থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখায়, ওসি বিনয় ভূষণ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব সম্প্রতি মেয়রের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা উল্লেখ করেছেন যে, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি নিরাপত্তা রয়েছে।