ঢাকা ০৩:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

মৌলভীবাজারে চা বাগানের নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি: বর্তমান অবস্থা ও করণীয় বিষয়ে কর্মশালা

সৈয়দ ছায়েদ আহমেদ::
চা বাগানের নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি: বর্তমান অবস্থা ও করণীয় বিষয়ে জেলা কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে আইডিয়া ও ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এর আয়োজনো ও জেলা প্রশাসন মৌলভীবাজার সহযোগিতায় এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।

চা শ্রমিকের পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি বর্তমান অবস্থা বিষয় ও অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন আইডিয়া প্রকল্প ব্যবস্থাপক পংকজ ঘোষ দস্তিদার।

চা বাগানের নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি: বর্তমান অবস্থা ও করণীয় এবং জিও এনজিও বিষয়ে সার্বিক ব্যাখা করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এর অ্যাডভোকেসি স্পেশালিস্ট রঞ্জন ঘোষ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও ওয়াটার এইড পলিসি এডভাইজার মো. সফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনা আক্তার, মৌলভীবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ খালেদুজ্জামান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়।

মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত, মৌলভীবাজার চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার শাহনেওয়াজ আহসান, প্রথম আলো মৌলভীবাজার প্রতিনিধি আকমল হোসেন নিপু, রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় কুমার বনার্জি, প্যানেল চেয়ারম্যান মো: সেলিম আহমেদ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামসুল ইসলাম, ম্যাক বাংলাদেশর নির্বাহী পরিচারক এস এ হামিদ, জেলা ফ্যামিলি প্ল্যানিং অফিসার বর্ণালী দাশ, কালিঘাট ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যান মো: আব্দুর সত্তার, চা শ্রমিক নেতা পস্কুজ কুন্দ ও আইডিয়া ভলেটিয়ার মন্টি বুনাজি প্রমুখ।

সভা শেষে অনুষ্ঠানের সারসংক্ষেপ ও সুপারিশ উপস্থাপন করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পলিসি এন্ড এডভোকেসী পরিচালক পার্থ হেফাজ শেখ এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইমামুর রহমান।

কর্মশালায় পাওয়ার প্রজেক্টের মাধ্যমে দেখা হয় ২০১৯ সালে সিলেট ও মৌলভীবাজার অঞ্চলের চা বাগানগুলোর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে বিবিএস পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে,  অপুষ্টির কারণে চা বাগানের ৪৫ শতাংশ শিশুই খর্বাকার, ২৭ শতাংশ শীর্ণকায়। স্বল্প ওজনের শিশু ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

এছাড়াও ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ৪৬ শতাংশ কিশোরীর, মা হয়ে যাচ্ছে ২২ শতাংশ। ন্যূনতম স্যানিটেশন সুবিধা নেই চা বাগানের ৬৭ শতাংশ পরিবারের।

চা বাগান এলাকায় নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াস) অবস্থা

সার্ভেতে দেখা গেছে চা-বাগান এলাকার ৭৪% মানুষ দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে, তাই আগ্রহ থাকলেও সকলের ল্যাট্রিন বা টিউবয়েল বসানোর আর্থিক সক্ষমতা নেই। সাধারন মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে সেবা পাওয়ার প্রবণতা বেশী।

অনেকে নিরাপদ পানি ও পায়খানার গুরুত্ব¡ সম্পর্কেও যথেষ্ট সচেতন না।

অধিকাংশ চা শ্রমিক খোলা জায়গায় পায়খানা করে, বাড়ির কাছাকাছি ল্যাট্রিন বসানোর ব্যাপারেও অনেকে আগ্রহী না।

চা বাগান এলাকায় পানির স্তর খুবই অপ্রতুল বা পানির স্থাপনা নির্মান যথেষ্ট কষ্টকর। চা শ্রমিকদের অনেকেই কুয়া, ঝরা বা খালের পানি পান করে, অনেক দূর থেকে পানি আনতে হয়।

টিউবয়েলের সংখ্যা কম, পানিতে প্রচুর পরিমানে আয়রন ও ব্যাক্টেরিয়া আছে, কোন কোন ক্ষেত্রে পানি দুর্গন্ধযুক্ত। সবজায়গায় নলকুপ বসানোও যায় না।

চা শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য ও জীবনমান উন্নয়নে, হাতধোয়া, মাসিককালিন স্বাস্থ্য পরিচর্চা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা মৌলিক ওয়াস বিষয়ে সচেতনতার মাত্রা তুলনামূলক কম। স্বাভাবিক কারণে জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির চর্চা কম।

নারী ও কিশোরীদের মাসিক স্বাস্থ্যবিধির অবস্থাও ভাল না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা পুরাতন কাপড় ব্যবহার করে, প্যাড ব্যবহারের প্রবণতা কম।

মালিক পক্ষ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং অন্যান্য সেবা প্রদানকারীদের নিকট থেকেও ওয়াশ উন্নয়নে বরাদ্দ কম।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন মোট ১৬৭টি চা-বাগান রয়েছে। চা শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চা-বাগান রয়েছে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায় ৯১টি।

চা বোর্ড কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায় ক্ষুদ্রায়তন চা আবাদ শুরু হয়েছে এবং ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে।

২০১৯ সালের এক তথ্য অনুযায়ী শীর্ষ ৫টি চা উৎপাদনকারী কোম্পানী হল ফিনলে, ডানকান, ন্যাশনাল টি, ইস্পাহানি ও ব্রাক।এ ছাড়াও চা বিপণনে যুক্ত রয়েছে আবুল খায়ের, মেঘনা, পারটেক্স স্টার ও এসিআই গ্রুপের মত প্রতিষ্ঠানগুলো।

সম্প্রতি সিটি গ্রুপ-এর মত কোম্পানিগুলোও ও চা উৎপাদন খাতে নতুন করে আরো বিনিয়োগ শুরু করছে।

 

মুক্তবার্তা২৪.কম/২০২২/১২/২০/মৌবাসৈছাআ

মৌলভীবাজারে চা বাগানের নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি: বর্তমান অবস্থা ও করণীয় বিষয়ে কর্মশালা

আপডেট সময় ১২:৫৭:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২২

সৈয়দ ছায়েদ আহমেদ::
চা বাগানের নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি: বর্তমান অবস্থা ও করণীয় বিষয়ে জেলা কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে আইডিয়া ও ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এর আয়োজনো ও জেলা প্রশাসন মৌলভীবাজার সহযোগিতায় এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।

চা শ্রমিকের পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি বর্তমান অবস্থা বিষয় ও অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন আইডিয়া প্রকল্প ব্যবস্থাপক পংকজ ঘোষ দস্তিদার।

চা বাগানের নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি: বর্তমান অবস্থা ও করণীয় এবং জিও এনজিও বিষয়ে সার্বিক ব্যাখা করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এর অ্যাডভোকেসি স্পেশালিস্ট রঞ্জন ঘোষ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও ওয়াটার এইড পলিসি এডভাইজার মো. সফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনা আক্তার, মৌলভীবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ খালেদুজ্জামান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়।

মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত, মৌলভীবাজার চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার শাহনেওয়াজ আহসান, প্রথম আলো মৌলভীবাজার প্রতিনিধি আকমল হোসেন নিপু, রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় কুমার বনার্জি, প্যানেল চেয়ারম্যান মো: সেলিম আহমেদ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামসুল ইসলাম, ম্যাক বাংলাদেশর নির্বাহী পরিচারক এস এ হামিদ, জেলা ফ্যামিলি প্ল্যানিং অফিসার বর্ণালী দাশ, কালিঘাট ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যান মো: আব্দুর সত্তার, চা শ্রমিক নেতা পস্কুজ কুন্দ ও আইডিয়া ভলেটিয়ার মন্টি বুনাজি প্রমুখ।

সভা শেষে অনুষ্ঠানের সারসংক্ষেপ ও সুপারিশ উপস্থাপন করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পলিসি এন্ড এডভোকেসী পরিচালক পার্থ হেফাজ শেখ এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইমামুর রহমান।

কর্মশালায় পাওয়ার প্রজেক্টের মাধ্যমে দেখা হয় ২০১৯ সালে সিলেট ও মৌলভীবাজার অঞ্চলের চা বাগানগুলোর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে বিবিএস পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে,  অপুষ্টির কারণে চা বাগানের ৪৫ শতাংশ শিশুই খর্বাকার, ২৭ শতাংশ শীর্ণকায়। স্বল্প ওজনের শিশু ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

এছাড়াও ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ৪৬ শতাংশ কিশোরীর, মা হয়ে যাচ্ছে ২২ শতাংশ। ন্যূনতম স্যানিটেশন সুবিধা নেই চা বাগানের ৬৭ শতাংশ পরিবারের।

চা বাগান এলাকায় নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াস) অবস্থা

সার্ভেতে দেখা গেছে চা-বাগান এলাকার ৭৪% মানুষ দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে, তাই আগ্রহ থাকলেও সকলের ল্যাট্রিন বা টিউবয়েল বসানোর আর্থিক সক্ষমতা নেই। সাধারন মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে সেবা পাওয়ার প্রবণতা বেশী।

অনেকে নিরাপদ পানি ও পায়খানার গুরুত্ব¡ সম্পর্কেও যথেষ্ট সচেতন না।

অধিকাংশ চা শ্রমিক খোলা জায়গায় পায়খানা করে, বাড়ির কাছাকাছি ল্যাট্রিন বসানোর ব্যাপারেও অনেকে আগ্রহী না।

চা বাগান এলাকায় পানির স্তর খুবই অপ্রতুল বা পানির স্থাপনা নির্মান যথেষ্ট কষ্টকর। চা শ্রমিকদের অনেকেই কুয়া, ঝরা বা খালের পানি পান করে, অনেক দূর থেকে পানি আনতে হয়।

টিউবয়েলের সংখ্যা কম, পানিতে প্রচুর পরিমানে আয়রন ও ব্যাক্টেরিয়া আছে, কোন কোন ক্ষেত্রে পানি দুর্গন্ধযুক্ত। সবজায়গায় নলকুপ বসানোও যায় না।

চা শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য ও জীবনমান উন্নয়নে, হাতধোয়া, মাসিককালিন স্বাস্থ্য পরিচর্চা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা মৌলিক ওয়াস বিষয়ে সচেতনতার মাত্রা তুলনামূলক কম। স্বাভাবিক কারণে জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির চর্চা কম।

নারী ও কিশোরীদের মাসিক স্বাস্থ্যবিধির অবস্থাও ভাল না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা পুরাতন কাপড় ব্যবহার করে, প্যাড ব্যবহারের প্রবণতা কম।

মালিক পক্ষ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং অন্যান্য সেবা প্রদানকারীদের নিকট থেকেও ওয়াশ উন্নয়নে বরাদ্দ কম।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন মোট ১৬৭টি চা-বাগান রয়েছে। চা শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চা-বাগান রয়েছে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায় ৯১টি।

চা বোর্ড কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায় ক্ষুদ্রায়তন চা আবাদ শুরু হয়েছে এবং ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে।

২০১৯ সালের এক তথ্য অনুযায়ী শীর্ষ ৫টি চা উৎপাদনকারী কোম্পানী হল ফিনলে, ডানকান, ন্যাশনাল টি, ইস্পাহানি ও ব্রাক।এ ছাড়াও চা বিপণনে যুক্ত রয়েছে আবুল খায়ের, মেঘনা, পারটেক্স স্টার ও এসিআই গ্রুপের মত প্রতিষ্ঠানগুলো।

সম্প্রতি সিটি গ্রুপ-এর মত কোম্পানিগুলোও ও চা উৎপাদন খাতে নতুন করে আরো বিনিয়োগ শুরু করছে।

 

মুক্তবার্তা২৪.কম/২০২২/১২/২০/মৌবাসৈছাআ