দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি ও সদ্য বহিস্কৃত শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাংবাদিক এম. ইদ্রিস আলী আবারও আলোচনায়। এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে তাঁর কথিত বিয়ে—যা নিয়ে এখন পুরো সামাজিক মাধ্যমে ও মৌলভীবাজারে চলছে তোলপাড়।
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার রাতে, যখন এম. ইদ্রিস আলীর কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, গভীর রাতে স্থানীয় কয়েকজন যুবক একটি বাড়িতে গিয়ে তাকে এক নারীর সঙ্গে একই খাটে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পান। তখন এম. ইদ্রিস আলী জানান, “ওই মহিলা আমার বিবাহিত স্ত্রী।” তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রমাণ বা কাবিননামা তিনি দেখাতে পারেননি।
পরে রবিবার (২০ অক্টোবর) ফেসবুক আইডিতে একটি এফিডেভিটের কপি প্রকাশ করেন, যেখানে উল্লেখ করেন যে তিনি নাসরিন বেগম নামের ওই মহিলাকে বিয়ে করেছেন। উক্ত নথিতে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৫৬০০, তারিখ ২০.০৮.২০২৫ এবং নোটারি পাবলিক হিসেবে এডভোকেট মো. বদরুল ইসলাম-এর স্বাক্ষর দেওয়া আছে। সনাক্তকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয় এডভোকেট মো. আব্দুল লতিফ-এর নাম।
কিন্তু মঙ্গলবার (০৪ নভেম্বর) মৌলভীবাজার নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করলে দেখা যায়, এই এফিডেভিটটি জাল ও অবৈধ।
উক্ত এফিডেভিটের বিষয়ে এডভোকেট মো. বদরুল ইসলাম লিখিতভাবে জানান—“মোঃ ইদ্রিস আলী ও নাসরিন বেগম নামে ২০/০৮/২০২৫ তারিখে মৌলভীবাজার নোটারি পাবলিক অফিসে কোনো বিবাহ সংক্রান্ত এফিডেভিট সম্পাদন করা হয়নি। আমাদের রেজিস্ট্রার বহিতে এর কোনো তথ্যও নেই। বরং উক্ত তারিখ ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর (৫৬০০) অনুযায়ী সুবেল মিয়া নামে এক ব্যক্তির গাড়ি বিক্রয় সংক্রান্ত এফিডেভিট রেকর্ড রয়েছে।”
অন্যদিকে এডভোকেট মো. আব্দুল লতিফ লিখিতভাবে জানান—“মৌলভীবাজার নোটারি পাবলিক অফিসে রেজি ৫৬০০ নং মূলে বিবাহ সংক্রান্ত কোনো এফিডেভিট সম্পাদন করা হয়নি। আমি সনাক্তকারীর স্বাক্ষর করিনি এবং উক্ত কাগজে আমার সিল ও স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।”
এদিকে স্ট্যাম্প বিক্রেতা মাহমুদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শাহীন মাহমুদ লিখিতভাবে জানান—“উক্ত স্ট্যাম্প আমার মাধ্যমে বিক্রিত হয়নি। আমার রেজিস্ট্রারে এ সম্পর্কিত কোনো রেকর্ড নেই এবং আমি এই স্ট্যাম্প বিক্রয়ের বিষয়ে কোনো তথ্য প্রদান করিনি।”
তিনজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এই লিখিত বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে এম. ইদ্রিস আলীর প্রকাশিত বিবাহ সংক্রান্ত এফিডেভিটটি অফিসিয়ালি রেজিস্ট্রারভুক্ত নয় এবং বৈধ নথি হিসেবে স্বীকৃত নয়। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, এই বিয়ের কাগজটি জাল বা অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে।
এমন নথি প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে উত্তাল আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। কেউ বলছেন, “বিয়েটি অবৈধ ও প্রতারণামূলক।
এদিকে, ঘটনাটির পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মৌলভীবাজার জেলা শাখা থেকে সাংবাদিক এম. ইদ্রিস আলীকে সাময়িকভাবে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক মো. ফয়জুল করিম মৌয়ুন ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে— “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এম. ইদ্রিস আলীকে জড়িয়ে প্রকাশিত ঘটনাগুলো দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। তাই তাঁকে উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হলো।”
দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একটি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা হলেন—১. জনাব আব্দুল মুকিত, সদস্য, জেলা আহ্বায়ক কমিটি ২. জনাব মোশাররফ হোসেন বাদশা, সদস্য, উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি ৩. জনাব মাহবুব ইজদানী ইমরান, সদস্য, জেলা আহ্বায়ক কমিটি। তদন্ত কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত শুক্রবার রাতে শ্রীমঙ্গলের শংকরসেনা এলাকায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওর মাধ্যমে ঘটনাটি প্রথম আলোচনায় আসে। এরপর থেকে বিয়ের বৈধতা ও নথির সত্যতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক বিতর্ক।
স্থানীয়ভাবে অনেকেই বলছেন, “ইদ্রিস আলীর বিয়ের দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে কাগজপত্র কোথায়?” অন্যদিকে, অনেকেই বলছেন, “যদি নথি জাল হয়, তবে এটি আইনি অপরাধ।”










