টানা ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানি ঢলের কারণে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছে। এ বন্যায় অসংখ্য ঘরবাড়ি, গ্রামীণ সড়ক, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। এর ফলে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সিলেটের সঙ্গে মৌলভীবাজারের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে গত রাত থেকে মৌলভীবাজারের নদীগুলোর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলার মনু নদী (রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্ট) বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার, চাঁদনীঘাট পয়েন্টে ১১৫ সেন্টিমিটার, এবং কুশিয়ারা নদী বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদিও সব পয়েন্টে পানির উচ্চতা ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার কমেছে, কিন্তু ভাঙন দিয়ে নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বন্যার কারণে মৌলভীবাজার-শেরপুর-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের বালিয়াকান্দি ও শাহবন্দর এলাকাগুলো মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এই দুটি স্থানে সড়ক সংলগ্ন মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ চুইয়ে পানি বের হচ্ছে, যা যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ মৌলভীবাজার-শেরপুর-সিলেট সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে। স্থানীয় লোকজনকে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, মনু ও ধলাই নদীর একাধিক স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বুধবার রাতে কমলগঞ্জ উপজেলায় ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙনের ফলে নতুন করে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একইভাবে, মনু নদীর টিলাগাঁও প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে কুলাউড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। রাজনগর উপজেলার টেংরা, কামারচাক, মনসুরনগর, এবং রাজনগর সদর ইউনিয়নে ত্রাণ সংকটের খবর পাওয়া গেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাদু মিয়া জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় ইতোমধ্যে ১০৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন।
মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের কদমহাটা এবং রাজনগর কলেজ এলাকার সড়কও বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় সিলেটের সঙ্গে এই সড়কের যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে।