মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চায়ের উৎপাদন বর্তমানে চরম সংকটে। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে জেলার বিভিন্ন চা-বাগানে চা গাছের পাতা পুড়ে যাচ্ছে এবং নতুন কুঁড়ি গজাচ্ছে না, ফলে চায়ের উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। নদ-নদী, ছড়া, জলাশয় ও লেক শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ ব্যবস্থা কার্যকরভাবে করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা জানান, এই পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তবে চা-চাষিরা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না, যা দেশের চা শিল্পে বড় ধরনের সংকট তৈরি করবে। চা-চাষিরা জানিয়েছেন, বৃষ্টি না হওয়ায় তাদের বাগানে নতুন কুঁড়ি আসছে না এবং গাছের বৃদ্ধি থমকে গেছে। তাপপ্রবাহের কারণে চা গাছের ওপর নানা ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণও বেড়ে গেছে, যা গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করছে।
এছাড়া, চা বাগান মালিকদের মতে, খরার মৌসুমে চা গাছে প্রতি ১৫ দিন পরপর সেচ দিতে হয়, কিন্তু পানির অভাবে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাগানগুলোর বেশিরভাগ গাছই এবার অস্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে গাছের পাতা ও কুঁড়ির বৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, চা গাছের সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে নিয়মিত সেচের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি না হলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যাবে। চা গাছের জন্য ideal তাপমাত্রা ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিন্তু বর্তমানে তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে, যা গাছের পুড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। চাষিরা জানাচ্ছেন, বিশেষ করে ছোট বাগানগুলোতে সেচের ব্যবস্থা না থাকায় তাদের অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে।
এদিকে, চা উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাষিরা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। তারা জানাচ্ছেন, চায়ের উৎপাদন খরচ বর্তমানে ২২০ টাকা প্রতি কেজি, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৮০ টাকায়, ফলে চা-শিল্পে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। চা উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা এখন তাদের বাগানগুলো পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, গত মাসে মাত্র ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় অনেক কম। গত পাঁচ মাসে এখানে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি, যা চা-বাগানগুলোকে আরও সংকটে ফেলেছে। বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেছেন, “বৃষ্টির অভাবে নতুন কুঁড়ি আসছে না, এবং গাছগুলোর অবস্থা খারাপ হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, “এত বেশি তাপমাত্রা চা গাছের জন্য উপযুক্ত নয়, এই কারণে চায়ের উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।”
চা-শিল্পের সংকট মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চা গাছের জন্য আধুনিক সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং খরা সহনশীল চা গাছের প্রজাতির ব্যবহারের পাশাপাশি, সরকারি সহায়তা প্রদান খুবই জরুরি। চা চাষিদের জন্য একটি সমন্বিত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে, সংকট থেকে কিছুটা উদ্ধার পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
এখন অপেক্ষা করা হচ্ছে বৃষ্টির জন্য, কারণ চা গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে বৃষ্টি একমাত্র আশার আলো। চাষিরা আশা করছেন, বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে, তবে যদি এই অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে, এবং দেশের চা শিল্পের জন্য তা বড় ধরনের আঘাত হতে পারে।