বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান দলের সকল নেতাকর্মীদের মধ্যে থাকা ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপিকে তৃণমূল থেকে শক্তিশালী করার জন্য আহ্বান জানিয়ে জনসমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এদেশে কি আর আওয়ামী লীগ, নৌকা বলে কোনো কিছু আছে? এরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) শ্রীমঙ্গল উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র উদ্যোগে বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শহরের পুরান বাজারে কর্মী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন—আপনারা যারা বিগত আন্দোলনে মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত হয়েছেন, জেল-জুলুম, নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদেরকে প্রাধান্য দিয়েই আগামীতে আমরা কমিটি করব। আজকে শ্রীমঙ্গলে যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে মিটিং করলেন, এভাবে এর আগে আমার মনে হয় না আমরা করতে পেরেছি। দলের আজকের এই কর্মী সমাবেশ একটা জনসমাবেশে রূপান্তরিত হয়েছে।
তিনি বলেন—বিএনপি এক এবং অভিন্ন। ঐক্যবদ্ধ বিএনপির কেউ ভিতরে, কেউ বাইরে, কেউ উত্তরে, কেউ দক্ষিণে, কেউ পূর্বে, কেউ পশ্চিমে থাকার কোনো সুযোগ নেই। তারেক রহমানের নির্দেশ এক বিএনপি এবং অভিন্ন বিএনপি। এর আগে তিনি শ্রীমঙ্গল উপজেলার অন্তর্গত ৯টি ইউনিয়ন বিএনপি ও পৌরসভার অন্তর্গত ৯টি ওয়ার্ড বিএনপি’র কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
কর্মী সমাবেশকে উপলক্ষ করে বিএনপি’র বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে সভাস্থলে উপস্থিত হন। নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে স্লোগান দিয়ে মুখরিত করে তোলেন সভাস্থল ও এর আশপাশ এলাকা।
বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর এই প্রথম শ্রীমঙ্গল শহরে বিএনপি কর্মী সমাবেশ করে। কর্মী সমাবেশটি হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে জনসভায় রূপান্তরিত হয়। দুপুর ১টা থেকে উপজেলার ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন থেকে শত শত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দেয়। পৌরসভার প্রত্যেকটি ওয়ার্ড থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে স্লোগানে মুখরিত করে সমাবেশস্থলে আসে।
সভায় জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল কালাম বেলালের সঞ্চালনায় এবং জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন এর সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন—বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম নাসের রহমান, আলহাজ মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব), জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান (ভিপি মিজান) ও এড. আবেদ রাজা।
আরো বক্তব্য রাখেন—জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও শ্রীমঙ্গল কর্মী সমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক ও সমন্বয়ক গাজী মারুফ, জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন বাদশা, আবদুল মুকিত, আবদুল ওয়ালি সিদ্দিকি, মুহিতুর রহমান হেলাল, হেলু মিয়া, বকসি মিছবাউর রহমান, মনোয়ার আহমেদ রহমান, মোঃ মহসিন মিয়া মধু, মতিন বক্স, স্বাগত কিশোর দাশ চৌধুরী, মোঃ ফখরুল ইসলাম, আনিসুজ্জামান বায়েছ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইয়াকুব আলী, তাজ উদ্দিন তাজু প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন—বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে যারা মামলা-হামলার শিকার হয়েও হাসিনা পতনের আন্দোলনে রাজপথে থেকে লড়াই করেছেন, তারাই আগামী নেতৃত্বে আসবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। বক্তারা আরো বলেন—দেশ এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আওয়ামী লীগ ও এর দোসরদের অব্যাহত ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সবাইকে ধৈর্য ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের জনগণের পাশে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, গ্রুপিং করে দলের বদনাম ছাড়া কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। দিন শেষে আমরা সবাই বিএনপি’র কর্মী, সেটা মাথায় রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।