ঢাকা ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
ব্রেকিং নিউজ
Logo কার্ডিফে বিপুল জনসাধারণের অংশগ্রহণে কনস্যুলার সার্ভিস Logo ট্রেন দুর্ঘটনায় ঢাকায় নিহত মৌলভীবাজারের শিক্ষার্থী তানজিম জয়; কিভাবে মারা গেলেন তিনি Logo বাংলাদেশ সরকারের ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে ইউকে ওয়েলস আওয়ামী লীগের সভা অনুষ্ঠিত Logo মৌলভীবাজারে জাল টাকাসহ আটক-২ Logo ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে ওয়েলস আওয়ামী যুবলীগের সভা অনুষ্ঠিত Logo মৌলভীবাজার জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার হলেন ওসি বিনয় ভূষণ রায় Logo শ্রীমঙ্গলে যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে ইমামদের নিয়ে নাটাবের আলোচনা সভা Logo ছাগল মোটাতাজা করার কৌশল: চিকিৎসা ও যত্নের সম্পূর্ণ গাইড Logo গাভি পালন ও দুধ উৎপাদন: লাভজনক কৌশল ও যত্নের টিপস Logo গরু পালন করে লাভবান হওয়ার কৌশল

গরু পালন করে লাভবান হওয়ার কৌশল

অনেকেই জানতে চান কিভাবে গরু পালন করলে লাভ করা সম্ভব। তবে, নতুন খামারিরা অনেক সময় কিছু না জেনেই এই সেক্টরে এসে পরে কান্নাকাটি করে। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, গরু পালন করে শুধুমাত্র তারাই লস করে যারা ফেসবুক, ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে বাচ্চা গরু ক্রয় করে কোরবানির আশায় দীর্ঘ সময় ধরে বস্তায় বস্তায় ফিড কিনে গরু পালন করেন।

নতুন খামারিরা ৬০-৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ৬ মাসের বাচ্চা গরু ক্রয় করে লাভবান হতে চায়। অন্যদিকে, ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি বড় দুই আড়াই বছর বয়সের শুকনো ক্রস গরু পাওয়া যায়। তাহলে এখন আপনি নিজেই বলেন, ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ছয় মাসের বাচ্চা কিনে দুই বছর পালন করে সেটাকে কত বিক্রি করবেন? খুব বেশি হলে দুই লাখ, অথচ দুই বছরে সেটার পিছনে পরিশ্রম আর খরচ করে এটা কিছুই নয়।

পুরাতন খামারিরা ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি দুই দাঁতের শুকনো গরু কিনে চার থেকে পাঁচ মাস পর দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে সুখের হাসি দেয়। গরুর খামারে লস করার প্রধান কারণ হলো মাংসের রেটে গরু কিনতে না পারা। মনে রাখবেন, আপনাকে গরু বিক্রি করতে গেলে কিন্তু মাংসের রেটেই বিক্রি করতে হবে। তাই কিনার সময় অবশ্যই বড় গরু মাংসের রেটে কিনতে হবে, তাহলে আপনি লাভ করতে পারবেন।

১০০ কেজি ওজনের একটি বাচ্চা গরু যার মাংস হবে ৫০ কেজি, সেটি আপনি ৭০ হাজার দিয়ে কিনে ৩ মাস পালন করে আরো ৫০ কেজি মাংস ধরানোর পরও সেই গরু কিন্তু মাংসের রেটে আবার ৭০ হাজার দিয়েই বিক্রি করতে হবে।

অনেক খামারি আরেক কারণে খামারে লাভ করতে পারেন না, সেটা হল কেনা খাদ্যের উপর নির্ভরশীলতা। খাদ্য অবশ্যই কিনে খাওয়াতে হবে, কিন্তু সেটার মান নিশ্চিত করতে হবে আপনার নিজেকে। একটি কথা মনে রাখবেন, আপনি যে কোম্পানির খাদ্যই কিনুন না কেনো, তাদের লেবার খরচ, খাদ্য আমদানি করার গাড়ি ভাড়া, প্যাকেটিং খরচ, পাশাপাশি লাভ সবকিছু হিসেব করেই কিন্তু তারা দাম নির্ধারণ করে।

অন্যদিকে অল্প অল্প করে আপনার এলাকা থেকে আপনি নিজে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সংগ্রহ করে নিজে যখন খাবার তৈরি করবেন, তখন লেবার খরচ, গাড়ি ভাড়া, কোম্পানির লাভ এইসবের জন্য খাদ্যের যে বাড়তি দাম রাখা হয়, সেটা আপনার খরচ হবে না কারণ আপনি কোনো কোম্পানির উপর নির্ভরশীল নন।

বেশিরভাগ অনভিজ্ঞ খামারি রেডি ফিড কিনতে গিয়ে প্রতি কেজি খাবারে কোম্পানিকে ১২ থেকে ১৫ টাকা বাড়তি দিয়ে দেয়। একটি বড় গরু দিনে খাবার খায় ৫ কেজি অর্থাৎ ৫*১৫=৭৫ টাকা বাড়তি খরচ করে। অথচ ৭৫ টাকা দিয়ে একটি মাঝারি সাইজের দেশি গরুর দানাদার খাবার হয়ে যায়। মানে এক গরুর টাকা দিয়ে দুই গরু পালন সম্ভব, তখন লাভের পরিমাণও হবে ডাবল। কেন, আপনার এলাকায় কি ধান, গম, ভুট্টা নেই?

ফিড কোম্পানিগুলো যদি ট্রাক ভাড়া দিয়ে ধান, গম, ভুট্টা এগুলো নিয়ে গিয়ে লেবার খাটিয়ে আবার আপনাদের কাছে বিক্রি করে তাদের টাকা তুলতে পারে, তাহলে আপনি কেন নিজের এলাকায় এসব খাদ্য কিনে নিজের খামারে ব্যবহার করবেন না? একটু চোখ-কান খোলা রেখে নিজের এলাকা থেকে বিভিন্ন রকম পশু খাদ্য সংগ্রহ করে একটু কষ্ট করলেই কিন্তু খাবার খরচ অর্ধেকে নেমে আসে। এখন আপনি যদি কষ্ট না করতে চান, তাহলে লাভ করবেন কিভাবে?

আমার আট বছরের অভিজ্ঞতায় আমি শিখেছি, গরু কিনতে গেলে আপনাকে অবশ্যই মাংসের রেটে গরু কিনতে হবে, সেটা যত সুন্দর গরুই হোক। কারণ বিক্রি করতে গেলে কসাই তার মাংস দেখবে, তখন গরুর চেহারা মূল্যহীন। আর যদি ভাবেন চেহারা দেখে কুরবানির আশায় গরু পালন করবেন, তাহলে ভুল করবেন। এখন আর কুরবানীতে মানুষ চেহারা দেখে গরু কিনে না, অল্প টাকায় বেশি মাংস খুঁজে।

বড় বড় খামারগুলো ভিজিট করুন, দেখবেন প্রত্যেক খামারীরই গোপন কিছু ট্রিক্স থাকে যেগুলো তারা কাউকে বলে না। ফলে দিনশেষে তারা লাভবান হলেও নতুন খামারিরা লসে পড়ে যায়। তাই বিভিন্ন পুরাতন খামারে ভিজিট করুন, তারা কিভাবে লাভ করে টিকে আছে জানতে চেষ্টা করুন, তাদের খাদ্য অবজারভেশন করুন, কিভাবে পরিচর্যা করে শুনুন এবং সেই নিয়মে খামার পরিচালনার পরিকল্পনা করুন। তাহলে দিনশেষে আপনিও লাভের মুখ দেখতে পারবেন ইনশাল্লাহ।

ট্যাগস :

কার্ডিফে বিপুল জনসাধারণের অংশগ্রহণে কনস্যুলার সার্ভিস

গরু পালন করে লাভবান হওয়ার কৌশল

আপডেট সময় ০৭:৪১:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪

অনেকেই জানতে চান কিভাবে গরু পালন করলে লাভ করা সম্ভব। তবে, নতুন খামারিরা অনেক সময় কিছু না জেনেই এই সেক্টরে এসে পরে কান্নাকাটি করে। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, গরু পালন করে শুধুমাত্র তারাই লস করে যারা ফেসবুক, ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে বাচ্চা গরু ক্রয় করে কোরবানির আশায় দীর্ঘ সময় ধরে বস্তায় বস্তায় ফিড কিনে গরু পালন করেন।

নতুন খামারিরা ৬০-৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ৬ মাসের বাচ্চা গরু ক্রয় করে লাভবান হতে চায়। অন্যদিকে, ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি বড় দুই আড়াই বছর বয়সের শুকনো ক্রস গরু পাওয়া যায়। তাহলে এখন আপনি নিজেই বলেন, ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ছয় মাসের বাচ্চা কিনে দুই বছর পালন করে সেটাকে কত বিক্রি করবেন? খুব বেশি হলে দুই লাখ, অথচ দুই বছরে সেটার পিছনে পরিশ্রম আর খরচ করে এটা কিছুই নয়।

পুরাতন খামারিরা ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি দুই দাঁতের শুকনো গরু কিনে চার থেকে পাঁচ মাস পর দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে সুখের হাসি দেয়। গরুর খামারে লস করার প্রধান কারণ হলো মাংসের রেটে গরু কিনতে না পারা। মনে রাখবেন, আপনাকে গরু বিক্রি করতে গেলে কিন্তু মাংসের রেটেই বিক্রি করতে হবে। তাই কিনার সময় অবশ্যই বড় গরু মাংসের রেটে কিনতে হবে, তাহলে আপনি লাভ করতে পারবেন।

১০০ কেজি ওজনের একটি বাচ্চা গরু যার মাংস হবে ৫০ কেজি, সেটি আপনি ৭০ হাজার দিয়ে কিনে ৩ মাস পালন করে আরো ৫০ কেজি মাংস ধরানোর পরও সেই গরু কিন্তু মাংসের রেটে আবার ৭০ হাজার দিয়েই বিক্রি করতে হবে।

অনেক খামারি আরেক কারণে খামারে লাভ করতে পারেন না, সেটা হল কেনা খাদ্যের উপর নির্ভরশীলতা। খাদ্য অবশ্যই কিনে খাওয়াতে হবে, কিন্তু সেটার মান নিশ্চিত করতে হবে আপনার নিজেকে। একটি কথা মনে রাখবেন, আপনি যে কোম্পানির খাদ্যই কিনুন না কেনো, তাদের লেবার খরচ, খাদ্য আমদানি করার গাড়ি ভাড়া, প্যাকেটিং খরচ, পাশাপাশি লাভ সবকিছু হিসেব করেই কিন্তু তারা দাম নির্ধারণ করে।

অন্যদিকে অল্প অল্প করে আপনার এলাকা থেকে আপনি নিজে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সংগ্রহ করে নিজে যখন খাবার তৈরি করবেন, তখন লেবার খরচ, গাড়ি ভাড়া, কোম্পানির লাভ এইসবের জন্য খাদ্যের যে বাড়তি দাম রাখা হয়, সেটা আপনার খরচ হবে না কারণ আপনি কোনো কোম্পানির উপর নির্ভরশীল নন।

বেশিরভাগ অনভিজ্ঞ খামারি রেডি ফিড কিনতে গিয়ে প্রতি কেজি খাবারে কোম্পানিকে ১২ থেকে ১৫ টাকা বাড়তি দিয়ে দেয়। একটি বড় গরু দিনে খাবার খায় ৫ কেজি অর্থাৎ ৫*১৫=৭৫ টাকা বাড়তি খরচ করে। অথচ ৭৫ টাকা দিয়ে একটি মাঝারি সাইজের দেশি গরুর দানাদার খাবার হয়ে যায়। মানে এক গরুর টাকা দিয়ে দুই গরু পালন সম্ভব, তখন লাভের পরিমাণও হবে ডাবল। কেন, আপনার এলাকায় কি ধান, গম, ভুট্টা নেই?

ফিড কোম্পানিগুলো যদি ট্রাক ভাড়া দিয়ে ধান, গম, ভুট্টা এগুলো নিয়ে গিয়ে লেবার খাটিয়ে আবার আপনাদের কাছে বিক্রি করে তাদের টাকা তুলতে পারে, তাহলে আপনি কেন নিজের এলাকায় এসব খাদ্য কিনে নিজের খামারে ব্যবহার করবেন না? একটু চোখ-কান খোলা রেখে নিজের এলাকা থেকে বিভিন্ন রকম পশু খাদ্য সংগ্রহ করে একটু কষ্ট করলেই কিন্তু খাবার খরচ অর্ধেকে নেমে আসে। এখন আপনি যদি কষ্ট না করতে চান, তাহলে লাভ করবেন কিভাবে?

আমার আট বছরের অভিজ্ঞতায় আমি শিখেছি, গরু কিনতে গেলে আপনাকে অবশ্যই মাংসের রেটে গরু কিনতে হবে, সেটা যত সুন্দর গরুই হোক। কারণ বিক্রি করতে গেলে কসাই তার মাংস দেখবে, তখন গরুর চেহারা মূল্যহীন। আর যদি ভাবেন চেহারা দেখে কুরবানির আশায় গরু পালন করবেন, তাহলে ভুল করবেন। এখন আর কুরবানীতে মানুষ চেহারা দেখে গরু কিনে না, অল্প টাকায় বেশি মাংস খুঁজে।

বড় বড় খামারগুলো ভিজিট করুন, দেখবেন প্রত্যেক খামারীরই গোপন কিছু ট্রিক্স থাকে যেগুলো তারা কাউকে বলে না। ফলে দিনশেষে তারা লাভবান হলেও নতুন খামারিরা লসে পড়ে যায়। তাই বিভিন্ন পুরাতন খামারে ভিজিট করুন, তারা কিভাবে লাভ করে টিকে আছে জানতে চেষ্টা করুন, তাদের খাদ্য অবজারভেশন করুন, কিভাবে পরিচর্যা করে শুনুন এবং সেই নিয়মে খামার পরিচালনার পরিকল্পনা করুন। তাহলে দিনশেষে আপনিও লাভের মুখ দেখতে পারবেন ইনশাল্লাহ।