চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নিয়ে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জেরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল চৌমুহনায় কয়েকশ ছাত্র ও জনতা বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধে অংশ নেয়।
বিক্ষোভের কারণ ছিল ইসকন সদস্য হিসেবে পরিচিত কল্লোল দেবের ফেসবুকে দেওয়া একটি মন্তব্য, যেখানে তিনি নিহত আইনজীবীকে নিয়ে অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করেন। তিনি লেখেন, “খুব ভালো হইছে গরুর মরতে গেছে, তাই মরে গেছে, দেখি কতটা ছিঁড়তে পারো ইসকনের?”—এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে শ্রীমঙ্গলের সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভকারীরা শ্রীমঙ্গলের চৌমুহনা এলাকায় “ইসকন সদস্য কল্লোলকে গ্রেফতার করো”, “সন্ত্রাসীদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না”, “ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাও” ইত্যাদি স্লোগান দেয়। বিক্ষোভের কারণে ঘণ্টাখানেক ধরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, এবং বিপুলসংখ্যক যাত্রী আটকে পড়ে।
বিক্ষোভের পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করেন যে অভিযুক্ত কল্লোল দেবকে গ্রেফতার করে থানায় আনা হয়েছে। এরপর বিক্ষোভকারীরা সড়ক থেকে সরে গিয়ে থানায় আলোচনায় অংশ নেন।
দুর্বৃত্তরা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করলে ছাত্রজনতার অভিভাবক হিসেবে ওসি মহোদয়ের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন এবং তাঁকে বিক্ষুব্ধ জনতার সামনে নিয়ে আসেন আল্লামা মুফতি শেখ শিব্বির আহমদ। মুফতি শেখ শিব্বির আহমদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বলেন, “ইসলামের জন্য আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত, তবে আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে দেশের পরিস্থিতি নষ্ট করার জন্য একটি গোষ্ঠী বিভিন্নভাবে আমাদের উস্কে দিতে পারে। এসব বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা দেখি শ্রীমঙ্গল থানার অভিভাবক ওসি মহোদয় আমাদের কী সান্ত্বনা দেন।”
ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, কল্লোল দেব থানায় তার বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়েছেন এবং সেই পোস্টটি ডিলিট করেছেন। তিনি আরও বলেন, “ফেসবুকে এমন মন্তব্যের মাধ্যমে জনমনে উত্তেজনা সৃষ্টি করা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনায় শ্রীমঙ্গলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক থাকলেও স্থানীয় জনগণ ভবিষ্যতে এ ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা আরও বলেন, দেশের শান্তি ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।