বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা: এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) যে ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছে, তা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি সুসংহত ও সময়োপযোগী নীতিমালা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান- এই প্রস্তাবনায় গণতন্ত্রের বর্তমান সংকট নিরসন এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলো নিয়ে একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৩১ দফা এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে উঠে এসেছে। গণতন্ত্র, সুশাসন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারের ভিত্তিতে প্রণীত এই দফাগুলো দেশকে নতুন এক যুগের পথে নিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন- গণতন্ত্রের সংকট বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিনের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির ৩১ দফায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং শক্তিশালীকরণের জন্য স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার মতো বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই নিবন্ধে আমরা ৩১ দফার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে দেখব কীভাবে এটি গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে পারে এবং দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
তিনি বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজার পৌরসভা মিলনায়তনে জেলা বিএনপির আয়োজনে আহবায়ক কমিটির সকল সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব কথা বলেন। ডা: জাহিদ বলেন- মরহুম এম সাইফুর রহমান স্যারের মতো অনেক মুরুব্বিদের ত্যাগ তিতিক্ষা, শ্রম, কষ্ট দেয়ার প্রেক্ষিতে আজকের বিএনপি এ পর্যায়ে এসেছে। তাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে এমন গুণীদের ত্যাগ তিতিক্ষা ও শ্রমের কথা। এখন কেউ যদি মনে করে আমরাই সব, তাহলে তো হবে না। গুণীদের সম্মান না করলে আপনাকেও কেউ সম্মান করবে না।
আজকের ইয়ং জেনারেশন, ছাত্রদল, যুবদল আমাদের কাছ থেকেই শিখবে। যে মানুষগুলো এই দলটাকে এই পর্যন্ত আনছে, তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানানো উচিত। তিনি বলেন, আপনাদের মৌলভীবাজারের কপাল ভালো, একজন শহীদ হয়নাই। কিন্তু হবিগঞ্জে দেখেন, একদিনে কতজন মারা গেছে। তারপর সিলেট দেখেন। সারা বাংলাদেশে ৪২২ জন বিএনপির নেতাকর্মী মারা গেছে জুলাই ও আগস্ট মাসে। আর হাজার হাজার নেতাকর্মী মারা গেছে গত সাড়ে ১৫ বছরে। ছাত্র জনতার আন্দোলনে ২ হাজারেরও বেশি ইন্তেকাল করেছেন। শহীদ হয়েছেন। ত্রিশ হাজারেরও বেশি চোখ নাই, পা নাই, হাত নাই। তাদের জন্য আজকে আমরা কথা বলছি। ইলিয়াস আলী কোথায় আছে, আমরা বলতেও পারি না। তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে জানে না, সে কি জীবিত না মৃত। না আয়না ঘরে, তার জন্য দোয়া করবেন। কাজেই এসব যদি ভুলে যান, তাহলে কিন্তু খুবই দুর্ভাগ্য আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কাজেই মনে রাখতে হবে তাদের সবার অবদান। ইলিয়াস আলী নয়, শুধু তার ড্রাইভারের অবদান। তার ড্রাইভার কোথায়? দিনার কোথায়? জুনেদ কোথায়? চৌধুরী আলম কোথায়? সাবেক এমপি হিরু কোথায়? জানি না। সেই আয়না ঘর থেকে আমরা কিছু লোককে ফিরিয়ে পেয়েছি, কিন্তু মোস্ট অব দি পিপুলকে তো আমরা ফেরত পাইনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের প্রধান ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন- বিগত সময়ে যারা আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন, তারাই নেতৃত্বে আসবেন। হঠাৎ করে এসে কেউ নেতা হতে পারবেন না। ছাত্রদলে ছিলেন কিনা, যুবদলে ছিলেন কিনা, স্বেচ্ছাসেবক দলে ছিলেন কিনা, বিএনপির মেম্বারশিপ ফর্ম ফিলাপ করা আছে কিনা, এগুলো কিন্তু লাগবে। কোন অবস্থাতেই আপনি হুট করে নেতা হতে পারবেন না। তিনি বলেন- বিএনপি একটি অর্গানাইজেশন এবং কোনও অবস্থাতেই ভাবার কারণ নেই যে কেউ বিএনপির জন্য খুবই অত্যাবশ্যকীয়। এ বিষয়টা সবার মাথায় রাখতে হবে। বিএনপির আনুগত্য হচ্ছে, দলের গঠনতন্ত্র এবং নেতৃত্ব। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
উনি কিন্তু বলেছেন, আর কখনও দেশনায়কও বলবেন না, রাষ্ট্রনায়কও বলবেন না। দয়া করে এ প্র্যাকটিসটা সকলে করবেন। ইউনিটগুলোর যে আহবায়ক কমিটি বানাবেন, ওখানে খেয়াল রাখতে হবে- যাদের কমিটিগুলো এরই মধ্যে বিলুপ্ত করেছেন, এই লোকগুলো কিন্তু বিগত সাড়ে পনেরো বছর তাদের ইউনিটগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছে। খারাপ দেখুক, ভালো দেখুক, যাই দেখুক, কম দেখুক, নির্লিপ্ত থাকুক, তারাই ছিল নেতা। কাজেই ৫ই আগস্ট বা ছত্রিশে জুলাই না হলে বা আজকের কর্মী সমবেশের উপস্থিতি দেখে মূল্যায়ন করলে চলবে না। উপস্থিতি একটু বিবেচনা করতে হবে, অতীতে যারা দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নে আন্তরিক ছিল, সেই মানুষগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে। যতদূর সম্ভব তাদেরকে আগে মূল্যায়ন করতে হবে, তারপর অন্য নেতাদেরও গুরুত্ব দিতে হবে।
যারা আমাদের সাথে ছিল, যারা একটা ইউনিয়নে, একটা ওয়ার্ডে, একটা উপজেলায়, একটা পৌরসভায় বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন, তাদেরকে অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে। তবে এটাও ঠিক, এবার যে (উপজেলা ও পৌরসভা) আহবায়ক কমিটি হবে, সে ইউনিটের আহবায়ক (জেলা ইউনিটের আহবায়ক) কিন্তু নির্বাচিত হয়ে দলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু খুবই শূন্য। তিনি নিউট্রাল সরকারের মতো। কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই। তার তো কাউন্সিল নেই। তিনি কাউন্সিলের সব কিছু করবে, আয়োজন করবে কিন্তু তার কোন ভোট করার সুযোগ নেই। তাকে নির্মোহ একটি অভিব্যক্তি থাকতে হবে। একইভাবে (উপজেলা ও পৌরসভা) ইউনিটের যে আহবায়ক থাকবে, তারও কিন্তু একই অবস্থা হবে। জেলার আহবায়ক ভোট করবেন না আর রাজনগরের আহবায়ক ভোট করবেন, এটা ভাববেন না। এটি হবে না। শুধুমাত্র পার্টির চেয়ারম্যান যদি কোনো ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটাতে চান, তাহলে তিনি কাউন্সিলে অংশ নিতে পারবেন। এমন একেকজনকে চয়ন করতে হবে ইউনিটগুলোর নেতা হতে, যার ধারেও কাটে ভারে এবং সবকিছুতেই কাটে। অর্থাৎ আন্দোলনের মাঠেও ছিল এবং মানুষ সম্মানও করে।
বিএনপির প্রেসিডেন্ট হবে একটা উপজেলার। সে লোকটা মনে রাখতে হবে, তার কাউন্টার পার্টি অন্য রাজনৈতিক দল। কোনো লোকটা হলে এই টিমটাকে টেনে নিয়ে যেতে পারবে। এ লোকটাকে মানুষ সম্মান করবে, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে, মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে, আস্থা অর্জন করতে পারবে। বিএনপির কর্মসূচীকে জনপ্রিয় করতে পারবে। ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের কর্মসূচী, রাষ্ট্র মেরামতের কর্মসূচী মানুষকে বুঝাতে হলে এক্স ওয়াই জেড কেউ বললে হবে না, নেতৃত্ব দিতে হলে ঐ লোকটাকেই খুঁজে বের করতে হবে, যে লোকটাকে ঐ ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। কাজেই নেতৃত্ব চয়ন করতে হবে ওভাবেই। কাজেই আমরা বাস্তবতার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাস্তবতার ভিতরে থাকতে হবে। তাহলেই দেখবেন আমরা সত্যিকার অর্থে নেতৃত্বের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারব।
জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূনের সভাপতিত্বে ও আহবায়ক কমিটির সদস্য মুহিতুর রহমান হেলালের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব জি কে গউছ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী। আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এম নাসের রহমান, ফয়সল আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, আলহাজ্ব এম এ মুকিত, নাসির উদ্দিন মিঠু, মহসীন মিয়া মধু, মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক, ফখরুল ইসলাম, বকসী মিছবাউর রহমান, মতিন বকস, মনোয়ার আহমেদ রহমান, স্বাগত কিশোর দাশ চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান, আবুল কালাম বেলাল, গাজী মারুফ প্রমুখ। এ সময় আহবায়ক কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।