মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে আনান প্যাক বিডি লিমিটেড কোম্পানির শ্রমিকরা দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বেতন-ভাতার অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় কোম্পানির প্রধান ফটকের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আনান প্যাকের শ্রমিক মাশফিকুর রহমান লিমন। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সানি আহমেদ, তাহমিনা আক্তার, জুলেখা বেগম, তুহিন মিয়া, সালমান মিয়া, রকি আহমেদ, জীবন আহমেদ, মৃদুল আহমেদ ও রমজান মিয়া।
এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কালাপুর সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি আফিকুল ইসলাম তমাল, জুলাই যোদ্ধা ইমরান খাঁন চাঁদ, সমাজসেবক শাহিনুর রহমান শামীম, উপজেলা যুবদল নেতা শেখ জমশেদ আহমেদ, তাজ উদ্দিন আহমেদ, রাজন আহমেদ রাজু ও পারভেজ আহমেদ প্রমুখ।
মানববন্ধন থেকে শ্রমিকরা তাদের ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
- সাধারণ শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ও চিকিৎসা ভাতা প্রদান।
- অপারেটর ও পুরাতন শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১৪ হাজার টাকা করা।
- তিন শিফটে কাজের ব্যবস্থা না করলে অতিরিক্ত ৪ ঘন্টাকে দ্বিগুণ ওভারটাইম হিসেবে গণনা।
- জোরপূর্বক ১২ ঘণ্টা ডিউটি বাতিল ও শ্রমিকের সম্মতি ছাড়া অতিরিক্ত কাজ না করানো।
- নিয়োগপত্র প্রদান, সময়মতো বেতন পরিশোধ, সরকারি ছুটিতে দ্বিগুণ হারে ওভারটাইম ভাতা।
- নারী শ্রমিকদের জন্য ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা।
- শ্রমিকদের ইউনিয়ন/কমিটি গঠনের সুযোগ দেওয়া।
- নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনরায় নিয়োগ প্রদান।
বক্তারা অভিযোগ করেন, এতদিন শ্রম আইন লঙ্ঘন করে শ্রমিকদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ সময় তারা কোম্পানিকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আনান প্যাক বিডি লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার মোঃ ফিরোজ আলম বলেন,
“শ্রমিকদের আন্দোলনে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সত্য নয়। প্রত্যেকটি কোম্পানির নিজস্ব রুলস ও রেগুলেশন আছে। আনান প্যাক বাংলাদেশ শ্রম আইনের প্রতিটি নিয়ম শতভাগ মেনে চলে। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সবই স্বচ্ছ। একজন শ্রমিকের কাজের মূল্যায়ন অনুযায়ী তাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আমাদের সব ব্রাঞ্চেই ৮ ঘণ্টা বেইজ ধরে ১২ ঘণ্টা কাজের ব্যবস্থা চালু রয়েছে, এবং এটি সুন্দরভাবে চলছে। হয়তো কিছু শ্রমিকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “একটি কোম্পানি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সময় লাগে। রাজনৈতিক ও ব্যাংকিং সমস্যাসহ নানান কারণে গত তিন বছরে আমরা পুরোপুরি স্থিতিশীল হতে পারিনি। তারপরও আমরা শ্রমিকদের সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি। চাকরি স্থায়ীকরণের পাশাপাশি ৫% ইনক্রিমেন্ট মালিকপক্ষ লস দিয়েও বজায় রেখেছে। প্রতি মাসে ৩০-৪০ লাখ টাকা লোকসান হলেও শ্রমিকদের বেতন আমরা সময়মতো দেওয়ার চেষ্টা করি। হয়তো ১-২ দিন এদিক-সেদিক হয়, তবে বেতন দেওয়া হয়। স্থানীয় কিছু লোকজন মিলে যেসব দাবি উত্থাপন করেছে তা কোনো ফ্যাক্টরি বা শ্রম আইনের সঙ্গে যায় না। তারপরও আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চাই, কিন্তু তারা আলোচনায় বসতে চান না।”
অন্যদিকে, আনান প্যাক বিডি লিমিটেডের পরিচালক মিস্টার অপু বলেন,
“আমরা এই ব্যবসা শুরু করেছি কোভিডকালীন সময়ে। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে এখনও প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। তবে শ্রমিকরা যদি অযৌক্তিক আন্দোলন করে তাহলে ফ্যাক্টরি বন্ধ করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই এলাকার মানুষই।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বর্তমানে বেতন বাড়ানোর সুযোগ আমাদের হাতে নেই। শ্রমিকরা যদি কাজ বন্ধ করে দেয় তবে প্রতিষ্ঠান বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই সবাইকে কাজে যোগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে নিজের মনে করে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।”
এ বিষয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, “আনান প্যাক বিডি লিমিটেড ও শ্রমিকদের মধ্যে যে সমস্যা হয়েছে তা ফ্যাক্টরির ভেতরেই সমাধান হওয়া উচিত। এ নিয়ে রাস্তায় নামা ঠিক নয়। এতে আমাদের এলাকার ক্ষতি হবে। এমনিতেই এখানে বিনিয়োগকারীরা আসতে চান না। আমাদের উচিত কোম্পানির সাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করা। অতীতে শ্রমিক আন্দোলনের কারণে এই এলাকায় ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যেতে দেখেছি। তাই এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে সবার সমাধানের মানসিকতা তৈরি করে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা জরুরি।”