শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র সাবেক প্রচার সম্পাদক ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি এম. ইদ্রিস আলী (৫৩)-এর কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, এলাকার কয়েকজন যুবক গভীর রাতে একটি বাড়িতে গিয়ে প্রথমে বাড়ির লোকজনকে ডাকাডাকি করছেন। কিছুক্ষণ পর একজন নারী ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। যুবকরা তখন তাকে জিজ্ঞাসা করেন, “আজ আপনাদের বাড়িতে কে এসেছে?” ওই নারী উত্তর দেন, “আমার মেয়ে ও ছেলে এসেছে।” তখন যুবকরা প্রশ্ন করেন, “তোমাদের বাড়িতে একজন লোক এসেছে, তুমি না করছো কেন?” এক পর্যায়ে নারীটি বলেন, “আমার বইনপুত (বোনের ছেলে) এসেছে।” এরপর যুবকরা বলেন, “সে কোথায়, দরজা খোলো।” কিন্তু নারীটি দরজা খুলতে অস্বীকার করেন এবং তাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
পরে যুবকরা ডাকাডাকি করলে ঘরের আরেকজন নারী দরজা খুলে দেন। দরজা খোলার পর দেখা যায়, এম. ইদ্রিস আলী ওই ঘরে উপস্থিত আছেন। যুবকরা তাকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি কে, এবং এত রাতে এই মহিলার সঙ্গে একই খাটে শুয়ে আছেন কেন?” উত্তরে এম. ইদ্রিস আলী জানান, “ওই মহিলা আমার বিবাহিত স্ত্রী।” তখন যুবকরা কাবিননামা দেখতে চাইলে ওই নারীর মা ও ভাই এগিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং ভিডিও না করতে অনুরোধ জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শুক্রবার রাত একটার দিকে উপজেলার শংকরসেনা এলাকার মৃত পাকি মিয়ার বিধবা মেয়ে নাসরিন (৩৫)-এর ঘরে প্রবেশ করেন এম. ইদ্রিস আলী। পরে এলাকাবাসী তাকে ওই নারীর সঙ্গে একই ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পান। দস্তাদাস্তির সময় অভিযুক্ত মহিলা নাসরিন বারবার এম. ইদ্রিস আলীকে আগলিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন। স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে, এসআই সজীবের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
এ বিষয়ে এসআই সজীব জানান, “রাতে ঘটনাস্থলে প্রচুর লোকজন ছিল। আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করি তার কোনো অভিযোগ আছে কি না, তখন সে জানায় ইদ্রিস আলী তার বিবাহিত স্বামী। তবে তারা এর পক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।” পরে এলাকাবাসীর চাপে ইদ্রিস আলী ওই নারীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শর্তে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন বলে পুলিশ জানায়।
অন্যদিকে, ইদ্রিস আলীর প্রথম স্ত্রী হেলেনা বেগম জানান, “আমার স্বামীর এই ঘটনা বা নতুন বিয়ে করার বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।”
এদিকে, এম. ইদ্রিস আলী শনিবার সকালে ফেসবুক লাইভে এসে দাবি করেন, “ তিনি তার শশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং তারি বিবাহীত স্ত্রীর সাথে রাত্রীযাপনকালে ওই এলাকার ছাত্রলীগের ছেলেরা মব সন্ত্রাস করে আমাকে লাঞ্ছিত করেছে।” এরপর তাকে এলাকায় ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ ও মিছিল করতেও দেখা যায়।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন বলেন, “ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। কেউ অন্যায় করলে তার দায় দল নেবে না।” তিনি আরও জানান, আজ শনিবার জেলা বিএনপি’র জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে সবার মতামতের ভিত্তিতে ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিঠি ঘঠন করা হবে। আমরা ইদ্রিস আলীর এ বিষয়ে অত্যান্ত মর্মাহত।
শংকরসেনা এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুরব্বি বলেন, “সে যদি সত্যি ওই মহিলাকে বিয়ে করে থাকে, তাহলে এলাকার লোকজন জানত। আর যদি লুকিয়ে বিয়ে করেই থাকে, তাহলে তার মা কেন প্রথমে অস্বীকার করল যে বাড়িতে কেউ নেই, আবার দরজা খুলতে দিল না কেন? যদি ইদ্রিস আলী সঠিক পথে থাকে, তাহলে তার ভয় কিসের? উপরন্তু তার প্রথম স্ত্রীও জানে না যে সে বিয়ে করেছে!”
এ বিষয়ে এম. ইদ্রিস আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে, তার মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
এম. ইদ্রিস আলীকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা। কেউ সমর্থনে, কেউবা বিরোধিতায় পাল্টাপাল্টি মন্তব্য করছেন, যা ইতিমধ্যে স্থানীয় মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।














