ট্যুরিস্ট পুলিশ ২০০৯ সালে ৭৮ জন জনবল নিয়ে যাত্রা শুরু করে কক্সবাজার থেকে। ওই সময় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ছিলাম। সেই অর্থে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাথে আমার সম্পর্ক ১৫ বছর ধরে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা একটা ইউনিট হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এটি প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে- দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধান করা এবং জীববৈচিত্র সংরক্ষণে সহযোগিতা করা। বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে বেশ অবদান রাখছে পর্যটন শিল্প। আমরা পর্যটকদের যেমন উৎসাহিত করছি, পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায়ও কাজ করে যাচ্ছি। সর্বোপরি আমরা সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ট্যুরিস্ট গ্রাম হিসেবে পরিচিত রাধানগরের হোটেল প্যারাগনের কনফারেন্স রুমে এক মতবিনিময় সভায় ট্যুরিস্ট পুলিশের ঢাকা-সিলেট-ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসাইন প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট জোন এর পুলিশ সুপার মোল্লা মোঃ শাহিন এর সভাপতিত্বে ও ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ এর ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোঃ কামরুল হাসান চৌধুরী’র উপস্থাপনায় পর্যটন শিল্পের বিকাশে স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় সভায় স্থানীয় স্টেকহোল্ডার ও তাদের প্রতিনিধি এবং পর্যটন সংশ্লিষ্টরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি আরো বলেন, আমরা শ্রীমঙ্গলের যেমন শ্রী রক্ষা করতে চাই তারই সাথে মঙ্গলও চাই। এই দু’টির সমতা করতে হলে স্থানীয়দের একটা ভূমিকা জরুরি। শুধু মাত্র ট্যুরিস্ট কিংবা থানা পুলিশের পক্ষে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। যদি স্থানীয়রা এগিয়ে না আসে। আমরা আশা করি আপনারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন। আমাদের পরিকল্পনা আছে মৌলভীবাজারে একটা ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপারের কার্যালয় করার। যাতে মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জ জেলায় আগত ট্যুরিস্টদের তিনি এখান থেকে সেবা দিতে পারেন। পাশাপাশি কমলগঞ্জেও একটা আলাদা অফিস করার পরিকল্পনা আছে। যাতে সহজে পর্যটকদের সহযোগিতা করা যায়। সেজন্য আপনাদের সহযোগিতা দরকার। বর্তমানে ১৪’শ পুলিশ রয়েছে এ ডিপার্টমেন্টে এটাকে আমার চারগুণে বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এটি বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে। সেটা হয়ে গেলে টুরিস্টদের সেবা এবং নিরাপত্তা দেওয়া আরো সহজ হবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি ট্যুরিস্ট এলাকায় স্থানীয় থানা পুলিশের সাথে সমন্বয় করে আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে যারা ট্যুরিস্ট এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত তাদের তালিকা করছি। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াচ্ছি। এছাড়া ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে ট্যুরিস্ট তথ্য ও সেবা’র জন্য একটা বুথ খুব শীঘ্রই চালু করতে যাচ্ছি। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-শ্রীমঙ্গলকে আমাদের অগ্রাধিকার লিস্টে এনে পর্যটকদের জন্য তথ্য সেবা প্রদান করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা আরেকটা জিনিস করতে চাই, সেটা হচ্ছে কমিউনিটি পুলিশিং এর মতো একটা ‘ট্যুরিস্ট সিটিজেন ফোরাম’ নাম দিয়ে খুব শীঘ্রই শুরু করতে যাচ্ছি। এটাতে আপনারাও অংশগ্রহণ করবেন। এতে এই এলাকার সমস্যাগুলো আপনাদের মাধ্যমেই সমাধান করার চেষ্টা করা হবে। এটাতে সকল স্টেকহোল্ডাররা সম্পৃক্ত থাকলে যেকোনো সমস্যা বসে সমাধান করা সহজ হবে।
এছাড়া কোন অপরাধীরা ট্যুরিস্ট সেজে এসে অপরাধ করছে কিনা সেজন্য তিন মাস পর পর এখানে আগত ট্যুরিস্টদের ডাটা সংগ্রহ করা হবে। এবং তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়ে ওই নামে কেউ আছেন কি না সেটা যাচাই-বাচাই করা হবে। যাতে দেশি কিংবা বিদেশি টুরিস্ট সেজে বড় ধরনের কোনো নাশকতা বা অপরাধ করতে না পারে। এসব উদ্যোগ আপনাদের এবং পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থেই নেওয়া হবে।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া শফি, বালিশিরা রিসোর্ট এর চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল হক, মাধবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু, স্মার্ট ট্যুরিজম এর সত্তাধিকারী ও দৈনিক নয়া দিগন্তের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি এম এ রকিব, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের আহবায়ক এম এ ওয়াহিদ রুলু, ট্যুর গাইড তাপস দাশ, লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মান্ত্রী (খাসিয়া নেতা) ফিলা প্রতমী, খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও মাগুরছড়া পুঞ্জির মান্ত্রী জিডিশন প্রধান সুছিয়াং (করডর), বন বিভাগের এসিএফ জামিল মোঃ খাঁন।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম বাপ্পি, পর্যটন উন্নয়ন পরিষদ রাধানগর এর সদস্য মোঃ তারেকুল রহমান, ৭১ টিভির মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি আহমেদ ফারুক মিল্লাদ, যায়যায় দিনের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম রুম্মন, সাংবাদিক আনিসুল ইসলাম আশরাফি, আদিবাসী নেত্রী মিতু রায় সিএমসি’র কোষাধ্যক্ষ জনক দেব বর্মা প্রমূখ।