মৌলভীবাজার ০১:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
Logo পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজ হ্যাকড Logo সৌদি আরব পৌঁছেছেন ১৭৬৯৪ হজযাত্রী Logo বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস Logo অশ্লীল ভিডিও এবং সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্তার: যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় এবং তার ক্ষতিকর প্রভাব Logo হাসিনা-রেহানা-টিউলিপসহ ৫৩ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা Logo মৌলভীবাজারে এড. সুজন মিয়া মিসকিলিংয়ের শিকার; পুলিশের চাঞ্চল্যকর তথ্য; গ্রেপ্তার ৫ Logo সাংবাদিকের জমির মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগে ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার Logo বিনিয়োগ সম্মেলন উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা Logo মৌলভীবাজারে মাদকবিরোধী অভিযান: ১ কেজি ১০০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক ৬ Logo সংবিধান ছাড়া যত সংস্কার আছে করেন : বিএনপি নেতা নাসের

সুউচ্চ গাছে ‘তেলি-গর্জন’ ফুলের শোভা

গাছ থেকে ঘাসে পড়েছে তেলি-গর্জন ফুল। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ছে। ভোরের মিষ্টি সতেজতার ভেতর স্বাস্থ্যসচেতনদের কেউ কেউ সেরে নেন প্রাতঃভ্রমণ। সকালের আলোপূর্ণ পথে পথে এগিয়ে যেতে শরীর আর মন হয়ে উঠে তরতাজা। তবে তার ভেতর প্রকৃতিপ্রেমীদের কেউ কেউ দেখে নেন ঝরাফুলেদের নির্লিপ্তভাবে পড়ে থাকার এ বিষয়টি। একসময় ঝরাফুলদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। মুগ্ধ হন পুষ্পময় সৌন্দর্যটুকু উপভোগ করে।

উপরের দিকে তাকাতেই – বোঝা যায় গাছটি দীর্ঘকায়। ছোট বা মাঝারি কোনো বৃক্ষ নয় এটি। যতটা উঁচু ততটাই অদেখা ফুলগুলি ফুটে আছে গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে। নিচ থেকে উপরের ফুল দেখার এ দৃশ্য সুখকর নয়, বিড়ম্বনাময়। কেননা, ফুলের অবয়ব তাতে কিছুতেই ধরা পড়ে না। কেবলি বোঝা যায়, কোনো সাধারণ ফুল ফুটে আছে এখানে।

 তবে নিচে পড়ে থাকা ফুলগুলির দিকে তাকালে সহজে অনুমান করা যায়, এটি কোনো সাধারণ ফুল নয়। এর বাহ্যিক শোভা এবং দেহগত আকৃতি মিলবে না আমাদের পরিচিত কোনো ফুলেদের সাথে।

পাঁচ পাপড়িযুক্ত এ ফুলটির নাম ‘তেলি-গর্জন’। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সড়ক পাশে এ বিশেষ প্রজাতির উদ্ভিদটি নীরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশের উদ্ভিদ জ্ঞানকোষ থেকে জানা যায়, তেলিগর্জন ফুলটি সাদা এবং তার প্রতিটি পাপড়িতে ফ্যাকাশে লাল টান রয়েছে। ফুলটি মৃদু সুগন্ধীযুক্ত। বৃতিনল ১.৫ সেমি লম্বা, খন্ড ৫টি, ৩টি খাটো, ২ মিমি লম্বা, ডিম্বাকার বা গোলাকার, বাকি ২টি ১ সেমি লম্বা, রৈখিক দীর্ঘায়ত এবং ফুলটি রোমশবিহীন। পাপড়ি ২ দশমিক থেকে ৪ দশমিক ৫ সেমি লম্বা এবং দীর্ঘায়ত। ১টি সুস্পষ্ট ও ২টি খাটো মূলীয় শিরাযুক্ত।

নেচার স্টাডি সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (এনএসএসবি) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ক্যাপ্টেন কাওছার মোস্তফা বলেন, ‘তেলি-গর্জন’ ফুলটিকে কেউ কেউ আবার ‘গর্জন’ ফুলও বলেন। এর বৈজ্ঞানিক নাম Dipterocarpus turbinatus এবং এটি Dipterocarpaceae পরিবারের বৃক্ষ। ফুল ফোটার সময় মার্চ থেকে এপ্রিল।

তিনি আরো বলেন, এটি চিরহরিৎ চিরসবুজ বনের বৃক্ষ। একেটি গর্জন গাছ সাধারণ ৩০ থেকে ৩৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় পাওয়া যায়। এর আদিনিবাস উত্তরপূর্ব ভারত এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। বাংলাদেশসহ থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন এবং চীনের কিছু অংশে পাওয়া যায়।

কাঠের গুণাগুন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর কাঠ ভালো। প্লাইউড শিল্পে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত রেলওয়ের স্লিপার এবং আসবাবপত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই গাছ থেকে এক ধরণের তেল পাওয়া যায়। যা বার্নিশ আর কালিতে ব্যবহার করা হয়। নানা ধরণের পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য এর তেল কাঠেও ব্যবহার হওয়ার উদাহরণ রয়েছে।

এই গাছটি ঔষধিগুণসম্পন্ন। ছোট কাটাছেড়া, আলসার, চর্মরোগ, গনোরিয়া প্রভৃতি রোগের বিরুদ্ধে উপকারী বলে জানান এ প্রকৃতিপ্রেমী।

 

ট্যাগস :

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজ হ্যাকড

সুউচ্চ গাছে ‘তেলি-গর্জন’ ফুলের শোভা

আপডেট সময় ০২:৫৪:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩

সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ছে। ভোরের মিষ্টি সতেজতার ভেতর স্বাস্থ্যসচেতনদের কেউ কেউ সেরে নেন প্রাতঃভ্রমণ। সকালের আলোপূর্ণ পথে পথে এগিয়ে যেতে শরীর আর মন হয়ে উঠে তরতাজা। তবে তার ভেতর প্রকৃতিপ্রেমীদের কেউ কেউ দেখে নেন ঝরাফুলেদের নির্লিপ্তভাবে পড়ে থাকার এ বিষয়টি। একসময় ঝরাফুলদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। মুগ্ধ হন পুষ্পময় সৌন্দর্যটুকু উপভোগ করে।

উপরের দিকে তাকাতেই – বোঝা যায় গাছটি দীর্ঘকায়। ছোট বা মাঝারি কোনো বৃক্ষ নয় এটি। যতটা উঁচু ততটাই অদেখা ফুলগুলি ফুটে আছে গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে। নিচ থেকে উপরের ফুল দেখার এ দৃশ্য সুখকর নয়, বিড়ম্বনাময়। কেননা, ফুলের অবয়ব তাতে কিছুতেই ধরা পড়ে না। কেবলি বোঝা যায়, কোনো সাধারণ ফুল ফুটে আছে এখানে।

 তবে নিচে পড়ে থাকা ফুলগুলির দিকে তাকালে সহজে অনুমান করা যায়, এটি কোনো সাধারণ ফুল নয়। এর বাহ্যিক শোভা এবং দেহগত আকৃতি মিলবে না আমাদের পরিচিত কোনো ফুলেদের সাথে।

পাঁচ পাপড়িযুক্ত এ ফুলটির নাম ‘তেলি-গর্জন’। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সড়ক পাশে এ বিশেষ প্রজাতির উদ্ভিদটি নীরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশের উদ্ভিদ জ্ঞানকোষ থেকে জানা যায়, তেলিগর্জন ফুলটি সাদা এবং তার প্রতিটি পাপড়িতে ফ্যাকাশে লাল টান রয়েছে। ফুলটি মৃদু সুগন্ধীযুক্ত। বৃতিনল ১.৫ সেমি লম্বা, খন্ড ৫টি, ৩টি খাটো, ২ মিমি লম্বা, ডিম্বাকার বা গোলাকার, বাকি ২টি ১ সেমি লম্বা, রৈখিক দীর্ঘায়ত এবং ফুলটি রোমশবিহীন। পাপড়ি ২ দশমিক থেকে ৪ দশমিক ৫ সেমি লম্বা এবং দীর্ঘায়ত। ১টি সুস্পষ্ট ও ২টি খাটো মূলীয় শিরাযুক্ত।

নেচার স্টাডি সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (এনএসএসবি) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ক্যাপ্টেন কাওছার মোস্তফা বলেন, ‘তেলি-গর্জন’ ফুলটিকে কেউ কেউ আবার ‘গর্জন’ ফুলও বলেন। এর বৈজ্ঞানিক নাম Dipterocarpus turbinatus এবং এটি Dipterocarpaceae পরিবারের বৃক্ষ। ফুল ফোটার সময় মার্চ থেকে এপ্রিল।

তিনি আরো বলেন, এটি চিরহরিৎ চিরসবুজ বনের বৃক্ষ। একেটি গর্জন গাছ সাধারণ ৩০ থেকে ৩৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় পাওয়া যায়। এর আদিনিবাস উত্তরপূর্ব ভারত এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। বাংলাদেশসহ থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন এবং চীনের কিছু অংশে পাওয়া যায়।

কাঠের গুণাগুন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর কাঠ ভালো। প্লাইউড শিল্পে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত রেলওয়ের স্লিপার এবং আসবাবপত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই গাছ থেকে এক ধরণের তেল পাওয়া যায়। যা বার্নিশ আর কালিতে ব্যবহার করা হয়। নানা ধরণের পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য এর তেল কাঠেও ব্যবহার হওয়ার উদাহরণ রয়েছে।

এই গাছটি ঔষধিগুণসম্পন্ন। ছোট কাটাছেড়া, আলসার, চর্মরোগ, গনোরিয়া প্রভৃতি রোগের বিরুদ্ধে উপকারী বলে জানান এ প্রকৃতিপ্রেমী।