জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. মো. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগেই হত্যাকান্ড শুরু করেছিল। তারা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে তা শুরু করেছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর পেছনের দরজায় বোঝাপড়া করে নির্বাচনী ইঞ্জিনিয়ারিং করে ক্ষমতায় এসেছিল। ক্ষমতায় এসেই তারা খুনের রাজনীতি শুরু করে। প্রথমেই তারা পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চালায়। আওয়ামী লীগ কাউকেই ছাড় দেয়নি। তারা জামায়াতের পর, বিএনপিকে ধরেছে, তারপর হেফাজত এবং দেশের আলেম-উলামাকে অপদস্থ করেছে। সাংবাদিকদের খুন, গুম করেছে। জেলে পুরেছে।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) জামায়াতে ইসলামি মৌলভীবাজার জেলা শাখা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের জেলা আমির ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদ আলীর সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামির আলীর পরিচালনায় কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের কেন্দ্রীয়, সিলেট বিভাগীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান ভারত প্রসঙ্গে বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) যে দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই, আপনারা শান্তিতে থাকুন আমরা চাই। আমাদেরকে আপনারা শান্তিতে থাকতে দিন। আপনাদের পাকঘরে কী পাকানো হয়, আমরা জিজ্ঞেস করতে চাই না। আমাদের পাকঘরে উঁকি মেরে তাকানোর চেষ্টা করবেন না। আমাদেরকে আপনারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন, কিন্তু নিজের চেহারা একবার আয়নাতে ভালোভাবে দেখুন। আপনারা সেখানে যাদেরকে মাইনরিটি বলেন, তাদের সাথে কেমন আচরণ করেন।
ডা. শফিক আরো বলেন, চক্রান্ত করে বিডিআরকে ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ বলতো এদেশে তারা শান্তি কায়েম করেছেন। আমি বলতাম, হ্যাঁ, দেশটাকে তারা কবরে পরিণত করে রেখেছে। কবরেতো মানুষ শান্তিতেই থাকে। যেভাবে তারা খুন, গুম ও গণহত্যা চালিয়েছিল, এদেশটা কবরই ছিল। জামাতের আমীর আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে না যেতেই তারা ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করে দিল। তারা সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিল। বিডিআরকে ধ্বংস করে সেই বাহিনীর সাড়ে ১৭ হাজার সদস্যকে চাকরিচ্যুত করল, সাড়ে ৮ হাজারকে জেলে নিল, জেলের ভেতরে এই পর্যন্ত সাড়ে তিনশ’র অধিক তারা মারা গেছে। আমাদের গর্বের এই বাহিনীটা ধ্বংস হলো। ক্ষমতা পাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে চক্রান্ত করে তাদেরকে ব্যবহার করে তাদেরকে ধ্বংস করে দিল।
আমাদের গর্বিত এই বাহিনীর নাম বলে এখন বিজিপি রাখা হয়েছে। আগে ছিল নামের সাথে একটা শব্দবৃত্ত, বাংলাদেশ রাইফেলস, এখন নাম দিয়েছে বর্ডারের চৌকিদার। ড্রেস বদলেছে, সব কিছু বদলিয়ে দিয়েছে। কারা এগুলো করেছে? কারা হত্যাকারী ছিল? যা কিছু জানতে দেওয়া হয়নি। লোকচুরি করা হলো। বিদ্যুত বন্ধ করে রাতের অন্ধকারে খুনিদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একটি বিশেষ দেশের প্লেন সেদিন কেন এসেছিল ঢাকায়? এরপর হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেল কিভাবে?
আমরা তখন আমাদের বন্ধু, সমস্ত রাজনীতি ব্যক্তিদের বলেছিলাম, এটি জামায়াতের উপর আঘাত নয়, এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার উপর সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত। স্বাধীনতার দেয়াল ভেঙে দিয়ে বাকি সবাইকে ভেসে দিবে, কেউ ঠিকতে পারবেন না। চলুন, আমরা সবাই মিলে ফ্যাসিবাদের সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করি। আপসোস, আমরা তাদের কথা গুলো বুঝাতে পারিনি। সবাই মিলে সেদিন যুদ্ধেটা করতে পারলাম না। তার পরের ইতিহাস আপনাদের সামনে পরিষ্কার।
আমরা শত চেষ্টা করেও তাদেরকে ঠেকাতে পারিনি। আমরা সেই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারলাম না। স্বৈরাচারকে আমরা তাড়াতে পারিনি। আমাদের সন্তানেরা করতে পেরেছে, আমি গর্বিত। আমি আমার সন্তাদেরকে ভালোবাসা উপহার দিচ্ছি। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, আমি তাদেরকে স্যালুট জানাচ্ছি। আল্লাহ তাআলার সাহায্যে একটা অসাধ্য তারা সাধন করেছে। এরকম সন্তান পেয়ে জাতি গর্বিত। ইনশাআল্লাহ, আগামীর বাংলাদেশ আমরা তাদের হাতে তুলে দেব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যাদেরকে দোষ দিত, তারা এদেশকে ভালোবাসে। তাদের কোন দিদির বাড়ি নেই, মাসির বাড়ি নেই। এদেশই আমাদের বাংলাদেশ।
কর্মী সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও সিলেট বিভাগীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. সেলিম উদ্দিন, ঢাকা পল্টন থানার সভাপতি শাহীন আহমদ খান, সিলেট জেলা আমির মো. হাবিবুর রহমান, সিলেট মহানগরী আমির মো. ফখরুল ইসলাম, সিলেট মহানগরীর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুর রব, সিলেট জেলা আমির মো. হাবিবুর রহমান, মহানগরী আমির মো. ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজার জামায়াতের সাবেক আমির সিরাজুল ইসলাম মতলিব, মো. আব্দুল মান্নান, হবিগঞ্জের জেলা আমির কাজী মখলিছুর রহমান, জামায়াতের মৌলভীবাজার কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আমিনুল ইসলাম, শিবিরের সিলেট মহানগরী সভাপতি শরীফ মাহমুদ, সদর আমির মো. ফখরুল ইসলাম, কুলাউড়া আমির আব্দুল মুনতাজিম, রাজনগর আমির আবু রাইয়্যান শাহিন, মৌলভীবাজার পৌর আমির তাজুল ইসলাম, মৌলভীবাজার শিবিরের জেলা সভাপতি হাফিজ আলম হোসাইন, মৌলভীবাজার পৌর শিবিরের সভাপতি তারেক আজিজ।
এছাড়া সম্মেলনে বক্তব্য বন্ধুপ্রতিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক মো. ফয়জুল করিম ময়ূন, মৌলভীবাজার খেলাফত মজলিসের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সবুর।