মৌলভীবাজার ০১:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
Logo সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিজিবির সর্বোচ্চ সতর্কতা জোড়দার Logo হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল মালিক আটক Logo আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া: অসুস্থতার এই সময়ে তার সুস্থতা ও রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন কেন জাতীয় প্রয়োজন Logo জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থান থেকে ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির রায়: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার পূর্ণ চিত্র Logo জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থান মামলায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় Logo শ্রীমঙ্গলের দুই মডেলকে নিয়ে ভাইরাল ভিডিও পোস্ট; অপপ্রচার অভিযোগে থানায় জিডি করলেন জারা ইসলাম Logo রাজধানীর উত্তরা ১২ ও ১৪ নম্বর সেক্টরে রাজউকের অভিযান, ৫ ভবন ও ১৭ মিটার জব্দ Logo নিউইয়র্কের মেয়র হয়েই ট্রাম্পকে মামদানির হুঁশিয়ারি: ‘ভলিউম বাড়ান’ Logo শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাংবাদিক এম. ইদ্রিস আলীর সদস্যপদ স্থগিত Logo সাংবাদিক ইদ্রিস আলীর বিয়ে বিতর্ক: ভাইরাল ভিডিও থেকে জাল এফিডেভিটের অভিযোগ!

সুউচ্চ গাছে ‘তেলি-গর্জন’ ফুলের শোভা

গাছ থেকে ঘাসে পড়েছে তেলি-গর্জন ফুল। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ছে। ভোরের মিষ্টি সতেজতার ভেতর স্বাস্থ্যসচেতনদের কেউ কেউ সেরে নেন প্রাতঃভ্রমণ। সকালের আলোপূর্ণ পথে পথে এগিয়ে যেতে শরীর আর মন হয়ে উঠে তরতাজা। তবে তার ভেতর প্রকৃতিপ্রেমীদের কেউ কেউ দেখে নেন ঝরাফুলেদের নির্লিপ্তভাবে পড়ে থাকার এ বিষয়টি। একসময় ঝরাফুলদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। মুগ্ধ হন পুষ্পময় সৌন্দর্যটুকু উপভোগ করে।

উপরের দিকে তাকাতেই – বোঝা যায় গাছটি দীর্ঘকায়। ছোট বা মাঝারি কোনো বৃক্ষ নয় এটি। যতটা উঁচু ততটাই অদেখা ফুলগুলি ফুটে আছে গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে। নিচ থেকে উপরের ফুল দেখার এ দৃশ্য সুখকর নয়, বিড়ম্বনাময়। কেননা, ফুলের অবয়ব তাতে কিছুতেই ধরা পড়ে না। কেবলি বোঝা যায়, কোনো সাধারণ ফুল ফুটে আছে এখানে।

 তবে নিচে পড়ে থাকা ফুলগুলির দিকে তাকালে সহজে অনুমান করা যায়, এটি কোনো সাধারণ ফুল নয়। এর বাহ্যিক শোভা এবং দেহগত আকৃতি মিলবে না আমাদের পরিচিত কোনো ফুলেদের সাথে।

পাঁচ পাপড়িযুক্ত এ ফুলটির নাম ‘তেলি-গর্জন’। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সড়ক পাশে এ বিশেষ প্রজাতির উদ্ভিদটি নীরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশের উদ্ভিদ জ্ঞানকোষ থেকে জানা যায়, তেলিগর্জন ফুলটি সাদা এবং তার প্রতিটি পাপড়িতে ফ্যাকাশে লাল টান রয়েছে। ফুলটি মৃদু সুগন্ধীযুক্ত। বৃতিনল ১.৫ সেমি লম্বা, খন্ড ৫টি, ৩টি খাটো, ২ মিমি লম্বা, ডিম্বাকার বা গোলাকার, বাকি ২টি ১ সেমি লম্বা, রৈখিক দীর্ঘায়ত এবং ফুলটি রোমশবিহীন। পাপড়ি ২ দশমিক থেকে ৪ দশমিক ৫ সেমি লম্বা এবং দীর্ঘায়ত। ১টি সুস্পষ্ট ও ২টি খাটো মূলীয় শিরাযুক্ত।

নেচার স্টাডি সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (এনএসএসবি) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ক্যাপ্টেন কাওছার মোস্তফা বলেন, ‘তেলি-গর্জন’ ফুলটিকে কেউ কেউ আবার ‘গর্জন’ ফুলও বলেন। এর বৈজ্ঞানিক নাম Dipterocarpus turbinatus এবং এটি Dipterocarpaceae পরিবারের বৃক্ষ। ফুল ফোটার সময় মার্চ থেকে এপ্রিল।

তিনি আরো বলেন, এটি চিরহরিৎ চিরসবুজ বনের বৃক্ষ। একেটি গর্জন গাছ সাধারণ ৩০ থেকে ৩৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় পাওয়া যায়। এর আদিনিবাস উত্তরপূর্ব ভারত এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। বাংলাদেশসহ থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন এবং চীনের কিছু অংশে পাওয়া যায়।

কাঠের গুণাগুন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর কাঠ ভালো। প্লাইউড শিল্পে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত রেলওয়ের স্লিপার এবং আসবাবপত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই গাছ থেকে এক ধরণের তেল পাওয়া যায়। যা বার্নিশ আর কালিতে ব্যবহার করা হয়। নানা ধরণের পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য এর তেল কাঠেও ব্যবহার হওয়ার উদাহরণ রয়েছে।

এই গাছটি ঔষধিগুণসম্পন্ন। ছোট কাটাছেড়া, আলসার, চর্মরোগ, গনোরিয়া প্রভৃতি রোগের বিরুদ্ধে উপকারী বলে জানান এ প্রকৃতিপ্রেমী।

 

ট্যাগস :

সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিজিবির সর্বোচ্চ সতর্কতা জোড়দার

সুউচ্চ গাছে ‘তেলি-গর্জন’ ফুলের শোভা

আপডেট সময় ০২:৫৪:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩

সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ছে। ভোরের মিষ্টি সতেজতার ভেতর স্বাস্থ্যসচেতনদের কেউ কেউ সেরে নেন প্রাতঃভ্রমণ। সকালের আলোপূর্ণ পথে পথে এগিয়ে যেতে শরীর আর মন হয়ে উঠে তরতাজা। তবে তার ভেতর প্রকৃতিপ্রেমীদের কেউ কেউ দেখে নেন ঝরাফুলেদের নির্লিপ্তভাবে পড়ে থাকার এ বিষয়টি। একসময় ঝরাফুলদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। মুগ্ধ হন পুষ্পময় সৌন্দর্যটুকু উপভোগ করে।

উপরের দিকে তাকাতেই – বোঝা যায় গাছটি দীর্ঘকায়। ছোট বা মাঝারি কোনো বৃক্ষ নয় এটি। যতটা উঁচু ততটাই অদেখা ফুলগুলি ফুটে আছে গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে। নিচ থেকে উপরের ফুল দেখার এ দৃশ্য সুখকর নয়, বিড়ম্বনাময়। কেননা, ফুলের অবয়ব তাতে কিছুতেই ধরা পড়ে না। কেবলি বোঝা যায়, কোনো সাধারণ ফুল ফুটে আছে এখানে।

 তবে নিচে পড়ে থাকা ফুলগুলির দিকে তাকালে সহজে অনুমান করা যায়, এটি কোনো সাধারণ ফুল নয়। এর বাহ্যিক শোভা এবং দেহগত আকৃতি মিলবে না আমাদের পরিচিত কোনো ফুলেদের সাথে।

পাঁচ পাপড়িযুক্ত এ ফুলটির নাম ‘তেলি-গর্জন’। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সড়ক পাশে এ বিশেষ প্রজাতির উদ্ভিদটি নীরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশের উদ্ভিদ জ্ঞানকোষ থেকে জানা যায়, তেলিগর্জন ফুলটি সাদা এবং তার প্রতিটি পাপড়িতে ফ্যাকাশে লাল টান রয়েছে। ফুলটি মৃদু সুগন্ধীযুক্ত। বৃতিনল ১.৫ সেমি লম্বা, খন্ড ৫টি, ৩টি খাটো, ২ মিমি লম্বা, ডিম্বাকার বা গোলাকার, বাকি ২টি ১ সেমি লম্বা, রৈখিক দীর্ঘায়ত এবং ফুলটি রোমশবিহীন। পাপড়ি ২ দশমিক থেকে ৪ দশমিক ৫ সেমি লম্বা এবং দীর্ঘায়ত। ১টি সুস্পষ্ট ও ২টি খাটো মূলীয় শিরাযুক্ত।

নেচার স্টাডি সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (এনএসএসবি) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ক্যাপ্টেন কাওছার মোস্তফা বলেন, ‘তেলি-গর্জন’ ফুলটিকে কেউ কেউ আবার ‘গর্জন’ ফুলও বলেন। এর বৈজ্ঞানিক নাম Dipterocarpus turbinatus এবং এটি Dipterocarpaceae পরিবারের বৃক্ষ। ফুল ফোটার সময় মার্চ থেকে এপ্রিল।

তিনি আরো বলেন, এটি চিরহরিৎ চিরসবুজ বনের বৃক্ষ। একেটি গর্জন গাছ সাধারণ ৩০ থেকে ৩৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় পাওয়া যায়। এর আদিনিবাস উত্তরপূর্ব ভারত এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। বাংলাদেশসহ থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন এবং চীনের কিছু অংশে পাওয়া যায়।

কাঠের গুণাগুন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর কাঠ ভালো। প্লাইউড শিল্পে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত রেলওয়ের স্লিপার এবং আসবাবপত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই গাছ থেকে এক ধরণের তেল পাওয়া যায়। যা বার্নিশ আর কালিতে ব্যবহার করা হয়। নানা ধরণের পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য এর তেল কাঠেও ব্যবহার হওয়ার উদাহরণ রয়েছে।

এই গাছটি ঔষধিগুণসম্পন্ন। ছোট কাটাছেড়া, আলসার, চর্মরোগ, গনোরিয়া প্রভৃতি রোগের বিরুদ্ধে উপকারী বলে জানান এ প্রকৃতিপ্রেমী।