সবুজ চা-বাগান আর নৈসর্গিক পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত শ্রীমঙ্গল শুধু চা-এর জন্যই নয়, বরং হাওর আর বিলের অপার সৌন্দর্যের জন্যও পরিচিত। তার মধ্যেই সবচেয়ে বিখ্যাত একটি নাম বাইক্কা বিল।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের অংশ এই বাইক্কা বিল, যা বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাখির অভয়ারণ্য এবং জলজ জীববৈচিত্র্যের অভিজ্ঞান হিসেবে বিবেচিত। ২০০৩ সালে এটি “স্থায়ী পাখির অভয়ারণ্য” হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বাইক্কা বিল বছরে প্রায় ৫-৬ মাস পানিতে ডুবে থাকে। বর্ষা মৌসুমে এখানে জমে উঠে বিশাল জলরাশি। আর সেই পানিতে খেলা করে রুই, কাতলা, টেংরা, পাবদা, বোয়ালসহ বহু জাতের মাছ। বিলজুড়ে শাপলা-শালুকের নরম বাহার আর গাছপালার ছায়ায় সৃষ্টি হয় এক মায়াবী পরিবেশ।
শীত এলে বাইক্কা বিল রূপ নেয় এক স্বপ্নের রাজ্যে। দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে হাজারো অতিথি পাখি, পাতি সরালি, পানকৌড়ি, বেগুনি কালেম, খঞ্জনা, নীলশির কাস্তেচরা সহ বহু জাতের পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে চারদিক।
স্থানীয় রফিক মিয়া বলেন, শীতে পাখিদের ঝাঁক দেখে মনে হয় আকাশও যেন নেমে এসেছে বিলে। এখানে যারা একবার আসে, বারবার ফিরে আসে।
বাইক্কা বিল এখন পর্যটকদের কাছে এক দারুণ গন্তব্য। বিলের পাশে তৈরি করা হয়েছে নজরদারি টাওয়ার, যেখানে উঠে পর্যটকরা দূরবীন দিয়ে পাখি ও প্রকৃতি দেখতে পারেন। পাশাপাশি, স্থানীয় জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ, আইইউসিএনসহ বিভিন্ন সংস্থা।
তবে সবকিছুর মাঝেও চিন্তার কারণ রয়েছে। অতিরিক্ত ধানচাষ, কীটনাশক ব্যবহার, জলজ আগাছা, ও অপ্রয়োজনীয় মাছ ধরা জীববৈচিত্র্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পর্যটকদের যথাযথ নিয়ম না মানার কারণেও মাঝে মাঝে পরিবেশে ক্ষতি হয়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিবেশ কর্মকর্তা বলেন, বাইক্কা বিল শুধু শ্রীমঙ্গলের সম্পদ নয়, এটা জাতীয় ঐতিহ্য। একে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।